গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘মন্দার কবলে ২০ কোম্পানি’ শীর্ষক খবরটি কোনো শুভবার্তা দেয় না। সেখানে আমাদের প্রতিনিধিদ্বয় জানিয়েছেন, চলতি বছরে ব্যবসায়িক মন্দায় পড়ায় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে গেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২০ কোম্পানি। এর মধ্যে সরাসরি উপরের ‘এ’ থেকে একেবারে নিচে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে গেছে ১২টি কোম্পানি। বাদবাকি ৮টি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে এসেছে ‘বি’ থেকে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্র বলছে, কোম্পানিগুলোকে এভাবে নামিয়ে দেওয়ার কারণÑতারা করপোরেট গভর্ন্যান্স পরিপালন করতে পারছে না, নয়তো এজিএম সময়মতো করতে পারেনি অথবা আর্থিক প্রতিবেদন সময়মতো জমাদানে ব্যর্থ হয়েছে কিংবা লভ্যাংশ দিতে অপারগ বা নিছক উৎপাদন কমে গেছে। সম্প্রতি ‘এ’ থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে যাওয়া আলোচিত এক শিপইয়ার্ড কোম্পানির সচিব শেয়ার বিজকে বলেছেন, “আমরা সময়মতো বার্ষিক সাধারণ সভা করতে পারিনি। তাই কোম্পানিটি ‘এ’ থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে এসেছে। আদালতের অনুমতি পাওয়ার পরপরই আমরা এজিএম করবো। তখন কোম্পানিটি আগের পজিশনে চলে আসবে।” একই দলভুক্ত আরেক ইন্ডাস্ট্রিজের সচিবের ব্যাখ্যা হলো, ‘গত এজিএম হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত থাকায় ব্যাংক থেকে লোন পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রায় ১০ মাস কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। একই সঙ্গে গাজীপুরের কারখানায় পর্যাপ্ত গ্যাস-বিদ্যুৎ না পাওয়ায় ডিজেলে উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে।’ তাদের দেওয়া এসব যুক্তি পুরোপুরি অস্বীকার করবেন না কেউ। কিন্তু খেয়াল করার মতো বিষয়, এসব সমস্যার বেশিরভাগই সাম্প্রতিককালের সৃষ্টি। আলোচ্য কোম্পানি দুটি যখন বাজারে আসে, তখন বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিল। প্রথম কয়েক বছর মুনাফা আর লভ্যাংশও কম দেয়নি। আর এখন? আমাদের প্রতিবেদকদ্বয়ের দেওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, শিপইয়ার্ডটির ইস্যু করা প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ছিল ৩৫ টাকা। লেনদেনের প্রাথমিক অবস্থায় কোম্পানির শেয়ারদর নাকি চলে যায় ৬৩ টাকার উপরে। অথচ গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি হয়েছে সর্বনি¤œ ২৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ২৮ টাকা ৪০ পয়সার মধ্যে। উল্লিখিত বাকি ইন্ডাস্ট্রিজের অবস্থা মোটামুটি একই। তাদের শেয়ার নাকি ইদানীং ফেস ভ্যালুর বেশ নিচেই বিক্রি হচ্ছে। খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন অবস্থা হলো কীভাবে।
অভিযোগ রয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে ওসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোমতো খোঁজখবর নেয়নি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আসলে কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্য বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বিনিয়োগ বাড়ানো ছিল না; বরং যখনই চলতি ব্যয় অর্থায়ন নিয়ে ঝামেলায় পড়েছে, তখনই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দারস্থ হয় তারা। বলা বাহুল্য, ‘এ’ থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমেছে যেসব কোম্পানি, তাদের শেয়ার আলোচিতই ছিল। এমনকি ‘বি’ থেকে যেসব শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে গেছে, তাদের ওপরও আস্থা ছিল না অনেক বিনিয়োগকারীর। নিঃসন্দেহে ওভাবে এক ধাক্কায় উপর থেকে একেবারে নিচে নেমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তার দায় কার? অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের উচিত ছিল ভালোভাবে কোম্পানিগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর করা। তারপর বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া। তবে এ প্রাথমিক দায়িত্বটি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ওপরও বর্তায়। তারা যদি ভালোমতো অনুসন্ধান না করে কিংবা কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সন্দেহজনক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে ডিস্টিংশনসহ অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেন, তাহলে বিনিয়োগকারী তো ভুগবেনই। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সজাগ না থাকলে এ ত্রুটি বিনিয়োগকারীদের পক্ষে দূর করা কঠিন। দেরি হলেও আমরা প্রত্যাশা করি, বিষয়টি যথাযথভাবে আমলে নিয়ে ত্রুটি দূরীকরণে অগ্রণী হবে বিএসইসি।