শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভোলার সদর উপজেলার মাঝের চরে তছির উদ্দিন বেপারী নামে এক কৃষক ক্যাপসিকাম চাষ করে বদলে ফেলেছেন নিজের ভাগ্য। তিনি শুধু নিজের ভাগ্যই বদল করেননি, বদলে দিয়েছেন ওই এলাকার চিত্র। ঝুঁকি নিয়ে বিদেশি এ সবজি আবাদ করে শুধু নিজেই স্বাবলম্বী
হননি, পাশাপাশি পথ দেখাচ্ছেন অন্যদেরও। তার দেখাদেখি ওই চরে অর্ধশতাধিক কৃষক ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন। বিদেশি এই সবজি হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখেও। খবর বাসস।
সফল ক্যাপসিকাম চাষি তছির উদ্দিন বেপারী জানান, ভোলা সদর উপজেলার বিচ্ছিন্ন মাঝের চরে প্রতিবছরই বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ হয়; কিন্তু ভালো দাম পাওয়া নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ থাকে কৃষকের। দুই বছর আগে ওই এলাকায় তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন। আন্তরিকতা থাকলেও চাষ সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। একের পর এক আধুনিক প্রদ্ধতি ও নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি ভিনদেশি এ সবজি চাষে মনোযোগী হন। দেশের বাইরে থেকে ক্যাপসিকামের বীজ সংগ্রহ করে সফলতা অর্জনের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামেন। কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক নিয়মে পরিচর্যার ফলে অল্পদিনেই ফলন শুরু হয়। প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে ৬০ হাজার টাকার বীজ বপন করে সে বছর তিনি ৫ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করেন। পরে এলাকার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে চাষের পরিসর বাড়াতে থাকেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এ মৌসুমে পর্যায়ক্রমে তিনি পাঁচ একর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন।
গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে চাষ শুরু করেন। ফেব্রুয়ারি পড়তেই সংশয়ের মেঘ কেটে যায়। চার মাসের মাথায় তিনি ৫ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করেন। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে আগামী এপ্রিল মাস পর্যন্ত তছির বেপারী প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করতে পারবেন।
তছির উদ্দিন আরও জানান, মাঝের চরের অনেকেই ভেবেছেন এখানে ক্যাপসিকাম হবে না। আমি চাষ করার পর এখন অনেকেই ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহী হয়েছেন। কিন্তু বীজ কোথায় পাবেন, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। সরকারিভাবে বীজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে আরও অনেকে ক্যাপসিকাম চাষে এগিয়ে আসবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মাঝের চরের চাষি করিম বেপারী, মালেক মাঝি, মাওলানা ইসমাইল হোসেন জানান, তছির উদ্দিনের সাফল্য দেখে ওই চরে এখন অর্ধশতাধিক কৃষক ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেছেন। সংসারের অভাব দূর করে তারাও ফিরে পেয়েছেন আর্থিক সচ্ছলতা। এতে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হয়েছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন তারা। তাই এই সবজি চাষে ঝুঁকছেন মাঝের চর ছাড়িয়ে ভোলার চাষিরাও।
ভোলা জেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা জানান, মেঘনা বিধৌত মাঝের চরের মাটি অত্যন্ত উর্বর, তাই দু-তিন বছর ধরে কৃষকরা ক্যাপসিকাম চাষ করে ভালো ফল পাচ্ছেন। তছির বেপারীর দেখাদেখি অনেকেই ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেছেন। এ বছর জেলায় ২০ একর জমিতে এর আবাদ হয়েছে। কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে দিন দিন এর আবাদ বাড়ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।