প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

ছয় বছর অপেক্ষার পর প্রথম দিনেই দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরু করা হয় ২০১১ সালে। কথা ছিল দুই বছরে এটি নির্মাণ করা হবে। তবে ছয় বছর পর গতকাল পুরো ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়েছে। আর পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধনের প্রথম দিনেই চরম দুর্ভোগে পড়েছে এটি ব্যবহারকারীরা। বাংলামোটরের উদ্দেশে শান্তিনগর বা রাজারবাগ থেকে যারা ফ্লাইওভারে উঠেছে তারা এক ঘণ্টার আগে নামতেই পারেনি। ফ্লাইওভারের ওপর সৃষ্টি হয় বড় ধরনের যানজট।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, এ ফ্লাইওভার যানজট কমিয়ে মানুষের সময় বাঁচাবে; কর্মচাঞ্চল্যও বাড়বে। আর স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দৈনিক ৫০ হাজার যানবাহন আট দশমিক ৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে পারবে। নিচের সড়ক ব্যবহার করা যাবে আগের মতোই।

উদ্বোধন ঘোষণার কিছুক্ষণ পর বেলা ১টার দিকে নানা রঙের পতাকা আর লাল-সবুজ কাপড়ে সাজানো ফ্লাইওভারের নানা প্রান্ত দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। অনেকে মোটরসাইকেলে করে, কেউ আবার পায়ে হেঁটে ফ্লাইওভার ঘুরে দেখেন। কয়েকটি খোলা ট্রাকে মাইকে গান বাজিয়ে ফ্লাইওভারে চক্কর দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

শুরুর দিকে কিছুটা স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল করলেও বিকালেই ফ্লাইওভারের ওপরে তৈরি হয় বিশাল জট। এ জট বাংলামোটর থেকে মগবাজার ছাড়িয়ে মৌচাক পর্যন্ত পর্যন্ত পৌঁছেছে। শান্তিনগরের বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নতুন উদ্বোধন হওয়ায় প্রথম দিনেই উঠেছেন ফ্লাইওভারে। গন্তব্য বাংলামোটর হয়ে কারওয়ান বাজার। তবে দেড় ঘণ্টা ফ্লাইওভারের ওপর বসে আছেন। গাড়ি যেন নড়ছেই না। সন্ধ্যার পর এ জট আরও বাড়তে থাকে। ক্রমেই তা মালিবাগ  মোড় পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুল নকশার কারণে ফ্লাইওভারের এ অংশে নিয়মিতই যানজট হবে। কারণ নকশা অনুযায়ী এটি ছিল বাঁহাতি গাড়ির জন্য। সেক্ষেত্রে শান্তিনগর বা রাজারবাগ থেকে গাড়ি উঠলে নেমে যেতে হবে মৌচাকে। আর যাদের বাংলামোটর যাওয়া প্রয়োজন তারা আবার পরের র‌্যাম্প দিয়ে উঠবে এবং নেমে যাবে মগবাজার পেরিয়েই। তবে এ অংশটি এখন ব্যবহার হচ্ছে ফেরার পথ হিসেবে। আর যাওয়ার পথে নামার কোনো সুযোগ নেই। ফলে একবার জট সৃষ্টি হলে আর কোনো উপায় নেই।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ফ্লাইওভারটিতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ওঠানামার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। ডানে মোড় নেওয়ার কোনো ব্যবস্থাও নেই। এতে ফ্লাইওভারটিতে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

এদিকে মৌচাক ও মালিবাগ পয়েন্টে ফ্লাইওভারের ওপরেই রয়েছে তিন রাস্তার মোড়। এজন্য দুই পয়েন্টে বসানো হয়েছে মোট ১১টি সিগন্যাল বাতি। আর এগুলো না মানলে যেকোনো সময় ফ্লাইওভারটির ওপরে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও বাধাহীনভাবে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতেই সাধারণত নির্মাণ করা হয় ফ্লাইওভার। এজন্য ফ্লাইওভারে কোনো মোড় থাকে না। তাই ফ্লাইওভারের ওপর সিগন্যাল বাতি বসানোর প্রশ্নও আসে না। যদিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার।

প্রসঙ্গত, এর আগে নকশায় ত্রুটি নিয়েই ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ খুলে দেওয়া হয় ফ্লাইওভারটির সাতরাস্তা-হলিফ্যামিলি অংশ। আর গত বছর সেপ্টেম্বরে এর বাংলামোটর-মৌচাক অংশ চালু করা হয়।

সম্প্রতি ফ্লাইওভারটিতে ঘুরে দেখা যায়, রামপুরা থেকে মৌচাক হয়ে শান্তিনগর ও রাজারবাগ অংশটি দুই ভাগে বিভক্ত। এর একটি অংশ তিনতলা, যা রামপুরা রোড থেকে মৌচাক হয়ে একটি র‌্যাম্প শান্তিনগর গিয়ে শেষ হয়েছে। অন্যটি গিয়ে নেমেছে রাজারবাগে। আর দুইতলা অংশটিও বাংলামোটর থেকে মগবাজার, মৌচাক হয়ে দুই র‌্যাম্পে বিভক্ত হয়েছে। এর একটি মৌচাক, মালিবাগ হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের কাছে শেষ হয়েছে। আরেকটি মালিবাগ থেকে শান্তিনগর গিয়ে শেষ হয়েছে।

মূলত এ অংশটিতেই ত্রুটি সবচেয়ে বেশি। এটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে মৌচাক ও মালিবাগ দুই মোড়েই ফ্লাইওভারের ওপরে তিন রাস্তার মোড় তৈরি হয়েছে। আবার শান্তিনগর থেকে ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে রাজারবাগের দিকে যেতে হলেও তিন রাস্তার মোড়ে পড়তে হবে। এ দুই মোড়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে ১১টি সিগন্যাল বাতি বসেছে। এর মধ্যে মালিবাগ মোড়ে ছয়টি ও মৌচাক মোড়ে পাঁচটি বাতি রয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে তা বাড়িয়ে এক হাজার ২১৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা করা হয়।