শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাজ্যে বাড়ি ভাড়া দিন দিন আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে, দেশটির রাজধানী লন্ডনে। সেখানে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে প্রতি মাসের গড় বাড়ি ভাড়া বেড়ে রেকর্ড ২ হাজার ৪৮০ পাউন্ডে পৌঁছেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩ লাখ ২৬ হাজার টাকার বেশি। ইনার লন্ডনের অবস্থা আরও শোচনীয়। ওই এলাকায় মাসিক বাড়ি ভাড়া ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তিন হাজার পাউন্ড বা ৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। খবর: দ্য টেলিগ্রাফ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি রাইটমুভের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বার্ষিক বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে ২০২২ সালে। দেশটির বাড়ি মালিকরা মাসে রেকর্ড ১ হাজার ১৭২ পাউন্ড (১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা প্রায়) ভাড়া দাবি করেছেন।
২০২২ সালে লন্ডনের বাইরে নতুন তালিকাভুক্ত সম্পত্তিগুলোয় গড়ে ভাড়া বেড়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এর আগে, ২০২১ সালে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বেড়েছিল সেখানে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
ভাড়াটিয়াদের জন্য আরও দুঃসংবাদ রয়েছে। রাইটমুভের ধারণা, ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে বাড়ি ভাড়া আরও অন্তত পাঁচ শতাংশ বাড়তে পারে। মূলত ভাড়াটিয়া এবং খালি থাকা সম্পত্তির সংখ্যায় ভারসাম্যহীনতার কারণে এ বছর দেশটিতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এরই মধ্যে বাড়ি ভাড়া নেয়ার প্রতিযোগিতা ধীরে ধীরে কমে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ভাড়ার যোগ্য খালি সম্পত্তির সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অন্তত ১৩ শতাংশ বেশি ছিল।
রাইটমুভের অন্যতম পরিচালক টিম ব্যানিস্টার বলেন, ভাড়াটিয়াদের মধ্যে বাড়ি খোঁজার তীব্র প্রতিযোগিতা যদিও শিথিল হতে শুরু করেছে, তারপরও এটি ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। বাড়ি ভাড়ার এজেন্টদের কাছে এখনও প্রচুর মানুষ আসছেন।
লন্ডনে থাকার খরচ এমনিতেই অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশি। কিন্তু বাড়ি ভাড়া এক লাফে এত বেশি হতে পারে, তা লন্ডনবাসী বিশ্বাস করতে পারছেন না। একই সঙ্গে শহরের কেন্দ্রে থাকা বাসিন্দারা যারা বাড়ি ভাড়া দিয়ে রোজগার করেন, তারা ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না।
তবে লন্ডনভিত্তিক স্বাধীন সম্পত্তি এজেন্ট ডগলাস অ্যান্ড গর্ডনের জেমস রেডিংটন বলেন, সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে অব্যাহত ভারসাম্যহীনতার কারণে ভাড়ার বাজার মন্থর হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। আমরা কয়েক দশক ধরে সর্বোচ্চ ভাড়া বৃদ্ধি দেখেছি এবং মনে হয় না, এটি অল্প সময়ের মধ্যে কমবে।
শুধু বাড়ি ভাড়া নয়, অনেকে বাড়ির মালিক গাড়ি রাখার জন্য পার্কিং স্পেস ভাড়া দেন। মেট্রো নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, লন্ডনের এক বাসিন্দা তার বাড়ির পার্কিং স্পেস ভাড়া দিয়ে বছরে কয়েক হাজার ডলার উপার্জন করেছেন।
গত বছরে শুধু লন্ডন নয়, এর বাইরে ম্যানচেস্টারের সলফোরড এলাকায় মানুষের উপার্জনের তুলনায় ঘর ভাড়া বেড়েছে অনেক বেশি। যুক্তরাজ্যে গত বছর থেকে যে কোনো বয়সের মানুষের তুলনায় তরুণদের উপার্জনের অর্থের বেশি চলে যায় ঘর ভাড়া খাতে। ফলে উপার্জন বৃদ্ধির গতির চেয়ে ভাড়া বৃদ্ধির গতি বেশি হওয়ায় তরুণরা বিপাকে পড়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে গত বছরের আগস্টে ক্যাম্পেইন গ্রুপ জেনারেশন রেন্ট সরকারের প্রতি রেন্ট বৃদ্ধিকে ফ্রিজ করে দেয়া এবং ঘর ছেড়ে দেয়ার আদেশকে স্থগিত করে রাখার আহ্বান জানায়। কারণ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে তরুণরা হিমশিম খাচ্ছেন। ডিপার্টমেন্ট ফর হাউজিং অবশ্য জানিয়েছে, নতুন একটি আইন আসছে। এ আইনের ফলে, কাউকে বিনা দোষে কারণে ছাড়তে বাধ্য করা যাবে না এবং অযৌক্তিকভাবে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন ভাড়াটিয়ারা।