এসএম রুবেল, কক্সবাজার: বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। এই দ্বীপে দিনের পর দিন বেড়ে চলছে প্যারাবন, পাহাড় ও বন কাটা। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এসব জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে পরিবেশবিধ্বংসী কাজগুলো থামাতে পারছে না কোনোভাবেই। বরং বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ একের পর এক মামলা দিয়ে আসামির সংখ্যা বৃদ্ধি করছে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্যারাবন, পাহাড় ও বন কাটা এবং বালি উত্তোলনসহ বিভিন্ন পরিবেশবিধ্বংসী কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ২৬৪টি মামলার চার্জশিট গঠন করা হয়েছে। কোনো কোনো মামলায় ১০-১২ জন, আবার কোনো মামলায় পাঁচ-ছয়জন করে আসামি রয়েছে। এসব আসামির মধ্যে সাবেক এমপি, মেয়র, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ও রাজনীতিবিদদের নামও উল্লেখ রয়েছে।
শুধু মামলা দিয়ে পরিবেশবিধ্বংসী কাজগুলো থামানো যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে গোরকঘাটা বিট অফিসার ও বনমামলা অফিসার জুলফিকার আলী জানান, পরিবেশবিধ্বংসী কাজগুলো কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না; বরং মামলা বাড়ছে, আসামি বাড়ছে, আর জবরদখলও বাড়ছে। চলতি সপ্তাহে আরও ৯টি নতুন মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, বনবিভাগে জনবল সংকট রয়েছে, যার কারণে প্যারাবন, পাহাড় কাটা ও বন কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান চালানো যাচ্ছে না। এছাড়া এসব কাজে জড়িতদের মাথার ওপরে বড় বড় রাজনৈতিক নেতার ছায়া রয়েছে। তাই তারা পার পেয়ে যায় এবং নতুন করে পরিবেশবিধ্বংসী কাজে জড়িয়ে পড়ে।
এদিকে পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, মহেশখালী দ্বীপের পরিবেশবিধ্বংসী কাজে জড়িত জবরদখলকারী গোষ্ঠীগুলো বেশ প্রভাবশালী। তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রয়েছে। মূলত এসব ভূমিদস্যু রাজনৈতিক ছত্রছায়ার নিচে থাকায় অভিযানের পরেও প্যারাবন, পাহাড় ও বন কাটা বন্ধ করে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া জানান, সর্বত্র উন্নয়নের নামে সর্বগ্রাসী আচরণ করে বনকাটা, প্যারাবন কাটা থেকে শুরু করে পরিবেশবিধ্বংসী কাজগুলো করা হচ্ছে। আইনকানুনগুলো প্রাণপ্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য তৈরি করা হলেও এসব প্রয়োগের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, যেমন বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা অন্য সংস্থাগুলো তা সঠিকভাবে পালন করছে না। রক্ষক যদি ভক্ষকে পরিণত হয়, তবে শুধু মামলা দিয়ে প্রাণপ্রকৃতি রক্ষা করা যাবে না। বিশেষ করে পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্যারাবন ও পাহাড়গুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।