প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

মার্কিন কোম্পানি বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে: পিটার হাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ডেটা সুরক্ষা আইন যদি ডেটা স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করার শর্ত দিয়ে অনুমোদন করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানি বাংলাদেশের বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে।

গতকাল রোববার রাজধানীর ইএমকে সেন্টারে ‘বাংলাদেশে অনলাইন স্বাধীনতা ও ব্যবসায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

পিটার হাস বলেন, আজকে আমরা এখানে একত্র হয়েছি বাংলাদেশে অনলাইন স্বাধীনতা এবং ব্যবসায়িক বিনিয়োগের যোগসূত্র নিয়ে আলোচনা করার জন্য। প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশে আসার পর থেকে আমি বাংলাদেশের ডিজিটাল যুগে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়া দেখে মুগ্ধ হয়েছিÑসেটা ফুডপান্ডা থেকে বিকাশ এবং এর বাইরেও বিস্তৃত।

এটা আমার কাছে স্পষ্ট যে, এ শতকে ডিজিটাল বিশ্বে বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখতে চায়। একই সঙ্গে, পৃথিবী দ্রুত বদলে যাচ্ছে। প্রতিটি দেশের সরকার ও সমাজ নতুন নতুন প্রযুক্তির দ্রুত গতিতে নাটকীয় পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং এ পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের আইনি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সাজানোর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমরা সবাইÑসেটা যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্ব।

তিনি বলেন, অনলাইন বিশ্ব আমাদের প্রচুর সুযোগের পাশাপাশি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও করেছে। বিশ্বের সব জায়গায় সরকারকে অবশ্যই অনলাইন ও এর সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যবহারকারীর ডেটা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিচালনা করার পাশাপাশি মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করায় সচেষ্ট থাকতে হবে। এ ধরনের শাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত জটিল একটা বিষয়। কারণ এটি আমাদের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার অপরিহার্যতা জড়িত ভারসাম্য বজায় রাখতে বাধ্য করে।

পিটার হাস আরও বলেন, আসুন, আমরা প্রথমেই অর্থনীতির বিষয় নিয়ে কথা বলি। এ শতকে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন উৎসাহিত না করে বিশ্বের কোনো দেশের পক্ষেই সফল হওয়া সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে আমাদের মিশনের কাজের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑবাংলাদেশের অর্থনীতির সম্প্রসারণ এবং বহুমুখীকরণের মাধ্যমে একটি টেকসই ও যৌথভাবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়াÑএমন একটি অর্থনীতি গড়ে তোলা, যা বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য উম্মুক্ত। আমরা আমাদের লক্ষ্যকে বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছি। একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য বৃহত্তর পরিসরে অর্থনৈতিক সংযোগ গড়ে তোলা প্রয়োজন, যা বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশকে নেতৃত্বের আসনে স্থান করে দেবে। বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে আরও সংযুক্ত করতে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে বৈশ্বিক ব্যবসায়ীরা এখানে আসতে আগ্রহ বোধ করেন এবং তারা একটি আমন্ত্রণমূলক পরিবেশ খুঁজে পান।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা ও এখানে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির ইচ্ছার কথা জানতে পেরেছি। বাংলাদেশের বাজার খুবই আকর্ষণীয়। আর এ কারণেই, আমরা সম্প্রতি দূতাবাসে একটি ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অফিস চালু করেছি। তবে একই সময়ে, আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ আশঙ্কার কথা শুনতে পাই যে, প্রস্তাবিত নতুন আইন ও প্রবিধানগুলো তাদের জন্য এখানে ব্যবসা করা আরও কঠিন করে তুলবে। এ বিষয়ে আমি একটু খোলামেলাভাবেই বলি, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দিক থেকে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওভার-দ্য-টপ প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য প্রণীত প্রবিধানগুলোর পাশাপাশি খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ আমরা যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্বকে মূল্য দিই, তাই আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা সরকারের কাছে সরাসরি তুলে ধরেছি। আমি আমাদের কিছু উদ্বেগের কথা বলার আগে একথা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাইÑআমরা বাংলাদেশের নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টিকে শ্রদ্ধা করি।