ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা): মা ইলিশ রক্ষায় আজ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন বঙ্গোপসাগর ও নদ-নদীতে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এ সময়ে ইলিশ আহরণ, বিপণন, মজুত, ক্রয়-বিক্রয় ও সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
এদিকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলেরা তাদের ট্রলার নিয়ে উপকূলে ফিরে এসেছেন। ইলিশের এ প্রজনন মৌসুমে সমুদ্রসীমায় ভারতীয় ট্রলার যাতে ইলিশ ধরতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা।
জানা যায়, প্রতিবছর আশ্বিন মাসের এ সময় গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে-ঝাঁকে মা ইলিশ উপকূলের দিকে এসে ডিম ছাড়ে। ইলিশের ডিম থেকে জাটকা এবং পরে জাটকা বড় ইলিশে পরিণত হয়।
পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এ মৌসুমে ৬০ শতাংশের বেশি মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। প্রজনন নিরাপদ করতে এ নিষেধাজ্ঞা শুরুর মধ্য দিয়ে এবছর রুপালি ইলিশের ভরা মৌসুম শেষ হবে। ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য ৬ অক্টোবরের আগে সাগর ও মোহনায় মাছ ধরায় নিয়োজিত সব নৌযান ও জেলেকে নিজ নিজ ঘাটে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেরা নদীতে নামলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে। উপকূলীয় পাথরঘাটায় প্রায় ২২ হাজার জেলে আছেন, যাদের মধ্যে ১১ হাজার ৪১১ জন নিবন্ধিত। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিবন্ধিত জেলেদের ২০ কেজি করে চাল দেয়া হবে।
গতকাল দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, সাগরে ইলিশ ধরতে যাওয়া উপকূলের প্রায় সব এলাকার জেলেরা তাদের ট্রলার নিয়ে ঘাটে এসেছেন। যারা আসেননি তারাও সাগর থেকে ঘাটের উদ্দেশে ফিরছেন। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে নোঙর করে আছে জেলেদের কয়েক শতাধিক ট্রলার।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জেলেরা আইন মেনে মাছ শিকার বন্ধ রাখলেও ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ জলসীমায় এসে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছেন। এসব বন্ধ করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ুন্ত কুমার (অপু) বলেন, মা ইলিশ যাতে নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য (৭ থেকে ২৮ অক্টোবর) পর্যন্ত সাগর ও নদীতে ইলিশ ধরা, মজুত, বাজারজাতকরণ ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইন বাস্তবায়নে মৎস্য অধিদপ্তর, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্থানীয় মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং জেলেদের উপকারের স্বার্থেই সরকারের এ আইন। আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই জেলেদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ আইন অমান্যকারীদের এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।