প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস ঠেকানো যাচ্ছে না

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বিনিয়োগকারীদের জন্য মূল্য সংবেদনশীল তথ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ তথ্যের ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগকারীরা কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা, না করা, শেয়ার বিক্রি কিংবা ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য একটি প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এ তথ্য গোপন রাখার কথা। কিন্তু হচ্ছে এর উল্টোটা। এ তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী, এ তথ্য সবার আগে ডিএসই, সিএসই ও বিএসইসির কাছে আসার কথা থাকলেও তাদের কাছে আসছে সবশেষে। ফলে একটি সুযোগসন্ধানী চক্র ফায়দা লুটছে। নষ্ট হচ্ছে বাজারের পরিবেশ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

জানা গেছে, কোম্পানির লাভ-লোকসান, শেয়ারপ্রতি আয়, নতুন বিনিয়োগ, মালিকানা বদল, কেনাকাটাসহ বাজারের জন্য মূল্য সংবেদনশীল সব তথ্য ফাঁস করছেন কোম্পানির শেয়ার ডিভিশনের লোকজন। কোম্পানি পরিচালকদের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ রয়েছে। এসব তথ্য ইতিবাচক হলে তারা শেয়ার কিনে তারপর বন্ধু-বান্ধবদের মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আর নেতিবাচক হলে শেয়ার বিক্রি করে খবর ছড়িয়ে দিচ্ছেন। খবর আগে যারা পান, তারা লাভবান হচ্ছেন। যারা আগে পাচ্ছেন না, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সম্প্রতি বস্ত্র খাতের একটি কোম্পানি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করবেÑআগেই এ খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রোকারেজ হাউসগুলোয় বিনিয়োগকারীদের মুখে আগে থেকেই এ কথা শোনা যায়। পরে কোম্পানির পক্ষ থেকে পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়।

একইভাবে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে প্রকৌশল খাতের একটি কোম্পানি। এর মধ্যে ২০ শতাংশ নগদ, বাকি ১০ শতাংশ। কোম্পানির এ ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা করবেÑবাজারে আগেই এ গুজব রটে যায়। সম্প্রতি কয়েকটি কোম্পানির সংবেদনশীল তথ্যের কথা উল্লেখ করে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বলেন, এসব কোম্পানি যখন অফিশিয়ালি তথ্য প্রকাশ করেছে, এর আগেই তাদের কাছে এ তথ্য ছিল।

এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, শুধু এসব খবরই নয়, কোন প্রতিষ্ঠানের ইপিএসই কেমন হবে বা আর্থিক হিসাব কেমন হবে সেসব খবরও আগেই মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও প্রথমে তা কিছু লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং তারা বেশি লাভবান হন। তিনি বলেন, কোনোভাবে যেন এসব তথ্য ফাঁস না হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া দরকার।

সূত্রমতে, যারা আগে থেকে সংবেদনশীল তথ্য পান, তারা সঙ্গে সঙ্গে এটা কাজে লাগাতে শুরু করেন। শেয়ারদর বাড়বে এমন খবর এলে তারা ক্রেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ফলে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের জন্য বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বেশি দেখা যায়। ক্রমে এ শেয়ারের দর বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে তার হাউসগুলো নিজেদের লোক দিয়ে শেয়ারদর বাড়বে এমন গুজব ছড়িয়ে দেয়, যার প্রভাবে শেয়ারদর দ্রুত বাড়তে থাকে। সর্বশেষ যখন এটা স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে আসে, তখন আর ওই শেয়ারের দর বাড়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা না বুঝে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বেশি দরে এ শেয়ার কেনেন। এ সুযোগে আগে যারা তথ্য পেয়েছিলেন, তারা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। এর কুফল ভোগ করতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। বেশিরভাগ সময় যার শিকার হন বাজারে নতুন আসা বিনিয়োগকারীরা। পক্ষান্তরে যখন কোনো কোম্পানির নেতিবাচক খবর আসে, সে খবরও আগে আগেই ফাঁস হয়। সে সময় নানা গুজব ছড়িয়ে কাক্সিক্ষত দরে শেয়ার বিক্রি করেন সুযোগসন্ধানীরা। পরে যখন খবর পান, তখন আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কিছু করার থাকে না। কারণ তিনি আগেই ফাঁদে পা দিয়ে বসে আছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোনো কোম্পানি এভাবে তথ্য ফাঁস করছে, এমনটি আমার জানা নেই। তবে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন করে এবং প্রমাণ হয়, তবে অবশ্যই নিয়মানুযায়ী তার শাস্তি হবে।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করে দেয়া অন্যায়। এটা সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন। বিষয়টি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। কেউ যদি এমন করে এবং তা প্রমাণিত হয় তবে অবশ্যই তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।