প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

মূসক জমা হোক যথাযথভাবে

কয়েক বছর ধরে নাগরিকদের মধ্যে কর দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ব্যক্তিপর্যায়ের করদাতার সংখ্যা যদিও আশানুরূপ নয়, কিন্তু মানুষ এখন যেভাবে আগ্রহ নিয়ে কর দিচ্ছেন, কর নিয়ে আলোচনা করছেন, তা ইতিবাচক। শুধু ব্যক্তিপর্যায়ে নয়, কেনাকাটা করতে গিয়েও মানুষ প্রতিনিয়ত কর দিচ্ছেন, যাকে বলা হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর (মূসক)। সেসব কর ঠিকমতো জমা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও সচেতনতা বেড়েছে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের দেওয়া মূসক ঠিকমতো জমা

হচ্ছে কি না, তা মোবাইল ফোনেই যাচাই করতে পারছেন অ্যাপের সাহায্যে। ফলে ব্যক্তিপর্যায়ে দেওয়া করের পাশাপাশি

ভোক্তা-প্রদত্ত করের পরিমাণও বেড়েছে।

এরপরও বলতে হয়, প্রত্যাশানুযায়ী কর জমা হচ্ছে না রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। ব্যক্তিপর্যায়ে যে পরিমাণ জমা হয়, তার চেয়ে বেশি কর জমা হওয়ার কথা মূসক থেকে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান ব্যবসায়ীদের পণ্য বিক্রির সময় ক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া মূসক যথানিয়মে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ আহ্বানেই স্পষ্ট, ক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া মূসক সরকারের কাছে যাচ্ছে না; থেকে যাচ্ছে ব্যবসায়ীর কাছে। এদেশে অসৎ ব্যবসায়ী অনেক, সৎ ব্যবসায়ীও কম নয়। অসৎ ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ভুয়া রসিদের মাধ্যমে কিংবা ভিন্ন কৌশলে মূসক আদায় করেন ঠিকই, কিন্তু সরকারের কোষাগারে জমা দেন না। অন্যদিকে সৎ ব্যবসায়ীদের একাংশ নিয়মিত মূসক দিলেও একটি অংশ মূসক জমা দেওয়ার নিয়মকানুন জানে না বা এখনও এ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে অসৎ ব্যবসায়ীদের অংশ ও সৎ ব্যবসায়ীদের একাংশের মূসক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র। যারা ইচ্ছে করে এ বিষয়ে দুর্নীতি করছেন এবং যারা অজ্ঞতাবশত মূসক জমা দিচ্ছেন না, উভয়ের প্রতি আমাদের আহ্বানÑনিয়মানুসারে মূসক জমা দিন।

এনবিআর চেয়ারম্যান এ-ও জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের মূসক জমা দেওয়ার জন্য এখন আর এনবিআরে যেতে হবে না। এনবিআরকেই বরং ডিজিটাল করা হয়েছে, যাতে ঘরে বসে মূসক দেওয়া যায়। এনবিআরই যাবে ব্যবসায়ীদের কাছে মূসক আদায়ের জন্য। আমরা মনে করি, প্রত্যেক ব্যবসায়ীরই কর্তব্য হওয়া উচিত নিজ উদ্যোগে মূসক জমা দেওয়া। এনবিআরের উদ্যোগকেও আমরা স্বাগত জানাই। এভাবেই মূসক জমাদানের সংস্কৃতি গড়ে উঠবে এবং একসময় এনবিআরকে আলাদাভাবে ব্যবসায়ীদের কাছে যেতে হবে না। তাছাড়া সরকার ব্যবসায়ীদের কাছে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার বা ইসিআর মেশিন সরবরাহ করছে, যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি রাজস্ব তহবিলে মূসক চলে যাবে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা যাতে মূসক প্রদানে কোনো অসুবিধার সম্মুখীন না হন, তার সব ব্যবস্থাই করছে সরকার। আমরা আশা করবো, এনবিআরের এসব উদ্যোগকে সম্মান জানিয়ে ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ব্যবসায়ীরা নিয়মিত মূসক দেবেন। এ মূসক বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করবে।