মেট্রোরেল মূলত একটি দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা, যা উন্নত বিশ্বের অনেক বড় শহরে ব্যাপকভাবে ব্যবহƒত হয়ে থাকে। মেট্রোরেল পরিবহন ব্যবস্থার মূল সুবিধা হলো অধিক মানুষ কম সময়ে যাতায়াত করতে পারে, পরিবেশবান্ধব পরিবহন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় গণপরিবহনের জন্য ‘ঢাকা মেট্রোরেল’ হলো ‘জাইকা’-এর অর্থায়নে একটি সরকারি প্রকল্প। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের গড় গতি ছিল প্রায় ২১ (২১.২ কিমি/ঘণ্টা), কিন্তু ২০১৫ সালে তা ৬ (৬.৮ কিমি/ঘণ্টা) এ নেমে আসে। ফলস্বরূপ, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাসে যেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার বেশি। মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। ঢাকা শহুরে ট্রাফিক সিগন্যালে যে সময় ব্যয় হয় মেট্রোরেলে সেই সময় কমে আসবে। যানজট, বায়ুদূষণ, গাড়ির নির্গত গ্যাস কমে যাবে। স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব কমবে। সব মিলিয়ে বহুমুখী প্রভাব পড়বে। এ ধরনের পরিবহন মানুষের জীবনধারা পরিবর্তন করে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশে ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছে মেট্রোরেল। বাংলাদেশের প্রথম, স্কাই ট্রেন বা মেট্রোরেল একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটা ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী আনা-নেয়া করবে। দিনে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি যাত্রী চলাচল করবে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। এটি একটি বিশাল আয়োজন এই অর্থে, এত যাত্রী এত অল্প সময়ে পরিবহন করায় যথেষ্ট সময় বেঁচে যাবে। পাঁচ লাখ যাত্রীর প্রত্যেকের অর্থের সাশ্রয় হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল ক্যাবে আসতে চাইলে ৬০০-৭০০ টাকার কমে কেউ আসতে পারবে না এবং সময়ও প্রচুর ব্যয় হবে। সিএনজি অটোরিকশা নিলেও ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার কমে সম্ভব হবে না, সেখানে ১০০ টাকায় যাতায়াত করা সম্ভব হবে অনেক কম সময়ে। ২০১২ সালে ১৮ ডিসেম্বর যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়, তখন এটার ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। মেয়াদ কল্পনা করা হয়েছে জুলাই ২০১২ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত। আগামী দেড় বছরে প্রকল্পটি কমলাপুরে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা। সেই অর্থে এটি বিশাল অবকাঠামো স্থাপনা। একটা নতুন উন্নত, সর্বশেষ প্রযুক্তি এতে সংযুক্ত রয়েছে। যেমন ধরুন, শব্দ নিরোধক অনেক দেশে, অনেক ব্রিজে থাকে। এখানে নতুন প্রযুক্তিতে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অত্যন্ত অত্যাধুনিক শব্দ নিরোধক ব্যবহার করার ফলে কম্পন কম হবে ও শব্দও খুব একটা শোনা যাবে না। সেই অর্থে এটা নতুন ধরনের প্রযুক্তি।
সর্বোপরি বলা যায়, ঢাকা শহরের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করবে এই মেট্রোরেল। যে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত দ্রুতগামী সেই দেশ ততটাই যানযটমুক্ত। তাই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুতগামী করার লক্ষ্যেই মেট্রোরেল প্রকল্প। মেট্রোরেল ঢাকা শহরের যানযটের চিত্র আমূল পাল্টে দেয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে।
ইমাম হোসেন
বারইয়ারহাট, মীরসরাই, চট্টগ্রাম