তুহিন ইসলাম, মেহেরপুর: কৃষিনির্ভর জেলা মেহেরপুরে ব্যাপকভাবে গম চাষ হয়ে আসছিল। উচ্চফলনশীল গম চাষে বেশ সাফল্য এসেছিল কৃষকদের। কিন্তু হঠাৎ অজানা এক রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে গম ক্ষেতগুলো। ফলে ফলন বিপর্যয়ে লোকসানের মুখে পড়েন জেলার গমচাষিরা। ২০১৬ সালে মেহেরপুরের গমক্ষেতে হুট করে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা যায়। তারপর থেকে কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করে কৃষি বিভাগ।
বেশ কয়েকবছর ধরে মেহেরপুরে কমতে থাকে গম চাষ। বিক্ষিপ্তভাবে কৃষকেরা সামান্য কিছু জমিতে গম চাষ করলে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ চরমে দেখা যায় ক্ষেতগুলোতে। চাষিরা প্রতিনিয়ত গম চাষ করে লোকশানের পড়তে থাকে। ফলে আগ্রহ হারিয়ে বেশ কয়েক মৌসুমে গম চাষ বন্ধ রেখেছিল জেলার অসংখ্য কৃষক। সম্প্র্রতি সময়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শে চলতি মৌসুমে ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি-৩৩, বারি ৩২-এগুলো চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চাষিরা।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে ১৩ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে লক্ষ?্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যত বেশি গম উৎপাদন হবে; ততই বেশি আমদানিনির্ভরতা কমবে এমনটাই মনে করছে কৃষি বিভাগ।
সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের গমচাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে এখন পযর্ন্ত গম চাষ করে ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি; তাই খরচের বিপরীতে অধিক লাভবান হওয়ার আশাবাদী আমরা। আমরা আশা করছি, এবার ১৮ থেকে ২০ মণ করে ফলন হবে।
উপজেলার ফতেপুর গ্রামের গমচাষি বাবুল বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার গমের চেহারা ভালো রয়েছে। রোগবালাই তেমন একটা লাগেনি; অধিক ফলন হবে ধারণা কেরছি। অন্য বছরের থেকে এবার আমরা লাভবান হব।
বতর্মানে জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে সোনালী রঙের পাকা ও সবুজের মাঝে হলদে বর্ণের গমক্ষেত। আবার অনেক চাষি আগাম গম চাষ করাই মাঠ থেকে ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। আবার অধিকাংশ গম চাষি অপেক্ষায় রয়েছেন আরও কিছুদিনের।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানান, ২০১৬ সাল থেকে জেলায় হুইট ব্লাস্ট শুরু হলে গম চাষ প্রায় বন্ধ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে ব্লাস্টপ্রতিরোধী জাতের গম চাষ করার জন্য পরামর্শ কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক চাষিরা ব্লাস্টপ্রতিরোধী গমের চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৫ হাজার হেক্টর আবাদ করা হয়েছে। এবার আমরা আশা করছি গমের ব্যাপক ফলন হবে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরামর্শ দেয়া যাচ্ছে।