নিজস্ব প্রতিবেদক: মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে দেশের ৫৬ শতাংশ মানুষ সঠিকভাবে জানে না। এছাড়া সাইবার নিরাপত্তা ও দক্ষতা, অবকাঠামো ও প্রতিযোগিতা মোবাইল ব্যাংকিং প্রসারে চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি এদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কেবল অর্থ লেনদেন হচ্ছে। অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রম যেমন আমানত রাখা ও ঋণ গ্রহণ প্রভৃতি হচ্ছে না। অথচ ভারত ও পাকিস্তানে সফলভাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এসব ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
‘সার্ক অঞ্চলে মোবাইল ফিন্যানসিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, শহরের ১৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মানুষ এবং গ্রামের ১২ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকের গ্রাহক। এছাড়া গরিবদের মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক, যেখানে ধনীদের সংখ্যা ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের ‘সার্ক ফাইন্যান্স সেল’ আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও সার্কভুক্ত ছয়টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। সেমিনারে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজি হাসান ও এসকে সুর চৌধুরী, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা আখতারুজ্জামান, পল্লি কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ইনস্টিটিউট অব ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাকী খলিলি।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলার আট হাজার ৯০০ পরিবারের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, এসব পরিবারের মধ্যে ২৭ শতাংশের নিজের অথবা অন্যের মোবাইলের মাধ্যমে এ সেবা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সুযোগ থাকলেও পরিবারগুলোর প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে। দেশের সাতটি বিভাগের মধ্যে বরিশাল ও রংপুর বিভাগের ২১ শতাংশ বয়স্ক মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছেন। তবে তা শহরকেন্দ্রিক। শহরের ১৬ দশমিক ০২ শতাংশ এবং গ্রামের ১২ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকের গ্রাহক। এছাড়া গরিবদের মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক, যেখানে ধনীদের সংখ্যা ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘দেশের ২০টি ব্যাংক অনুমোদন নিয়ে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ১৩ কোটি ১০ লাখ মোবাইল ব্যবহারকারীর মধ্যে মাত্র তিন কোটি ৯০ লাখের মতো মোবাইল ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। প্রতিদিন এতে ৭০০ কোটি টাকার মতো লেনদেন হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বড় বাজার। ২০১৫ সালে ১০ কোটি ২০ লাখ নিবন্ধিত অ্যাকাউন্ট ছিল। এর মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ সচল। বিশ্বের ৫৫ দশমিক ছয় শতাংশ গ্রাহক রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। তবে এ অঞ্চলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রাপ্তবয়স্কদের অ্যাকাউন্টের পরিমাণ খুব কম, মাত্র তিন শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেবার আওতাবহির্ভূত অঞ্চলে মোবাইল ব্যাংকিং বিকশিত হচ্ছে। পাশাপাশি মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাস ও অর্থায়ন ইত্যাদির ঝুঁকিও বাড়ছে। সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
ড. বাকী খলিলি বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন বাড়িয়ে আয়বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব। ২০২০ সালের মধ্যে আয়বৈষম্য কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ কমানো সম্ভব হবে শুধু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রসার ঘটিয়ে।’
ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, ‘বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে ৬৮৯ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়, যা ছয় লাখ ৭১ হাজার এজেন্ট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।’ আর্থিক লেনদেনে ঝুঁকি এড়ানো সব সময়ের জন্য চ্যালেঞ্জ বলে তিনি মনে করেন।
ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ৫৬টি তফসিলি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টিকে মোবাইল ফিন্যানসিয়াল সার্ভিস লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের এ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু গ্রামীণফোন, বাংলালিংকসহ সব মোবাইল অপারেটরকে নিয়ন্ত্রণ করে বিটিআরসি। তাই মোবাইল অপারেটরগুলোকে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে না। মোবাইল অপারেটরদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দেওয়ার পর তাদের কাজে অনিয়ম হলে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার থাকবে না। তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর ভালো-মন্দ দেখা আমাদের দায়িত্ব। মোবাইল অপারেটরদের ব্যাংকিং সেবার অনুমতি দেওয়ার আগে আমাদের ব্যাংকগুলোর স্বার্থ দেখতে হবে।’
দিনব্যাপী এ সেমিনারে সার্কভুক্ত দেশ ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তারা তাদের দেশের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম তুলে ধরেন।