প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

যমজ দুই বোন পেল জমজ গোল্ডেন জিপিএ-৫

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আশরাফুল ইসলামের মেয়ে সামিয়া খাতুন ও সাদিয়া খাতুন নামের জমজ দুইবোন।
একসঙ্গে তাদের জন্ম, একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। প্রাথমিক, মাধ্যমিককে পড়েছেন একই প্রতিষ্ঠানে। সব ক্ষেত্রে দু’জনের ফলাফলও একই। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগী। টিউশনি করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছেন মা। তবুও লেখাপড়া থেকে একচুল পিছু হটেনি উপজেলার ধুবইল গ্রামের হাজীপাড়ার আশরাফুল ইসলামের মেয়ে সামিয়া খাতুন ও সাদিয়া খাতুন নামের জমজ দুইবোন। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে বেড়ে ওঠা এই দুইবোন সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।

শুধু তাই নয়, অর্থের অভাবে সামিয়া-সাদিয়ার নিজেরা প্রাইভেট পড়তে না পারলেও তারা তাদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন নিজেরা টিউশনি করে। জমজ এই দুইবোনের এমন সাফল্যে খুঁশি সহপাঠি, পরিবার, গ্রামবাসীসহ স্কুলের শিক্ষকরাও।

জানা গেছে, এইদুই জমজ বোন কুষ্টিয়ার মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। জমজ দুইবোনের কাছে প্রাইভেট পড়তে আসা ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা জানান, সামিয়া-সাদিয়া আপুরা আমাদের সুন্দর করে পড়ান। দুই আপুর এমন কৃতিত্বে দারুন খুঁশি আমরা। বড় হয়ে লেখাপড়াই সামিয়া-সাদিয়ার মতোই হতে চান তারা।

প্রতিবেশী সোনিয়া খাতুন বলেন, জমজ দুইবোন সামিয়া খাতুন ও সাদিয়া খাতুন। তাদের বাবা আশরাফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়ীতেই থাকেন। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আশরাফুল অসুস্থ থাকায় তিন মেয়েকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন মা আসমা খাতুন। স্বামীর চিকিৎসার খরচসহ মেয়েদের শিক্ষিত করতে নিজেই সংসারের হাল ধরেন। এইচএসসি পাশ থাকায় বাড়ীর আশপাশের ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে এবং পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া স্বামীর সামান্য মাঠের জমি লিজ দিয়ে কোন রকম সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি। সংসারে চরম অভাব-অনটন থাকলেও লেখাপড়া থেকে একচুল পিছু হটেনি তাদের মেয়েরা। এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমরা উচ্ছাসিত। সামিয়া ও সাদিয়ার উচ্চ শিক্ষার জন্য সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

আরেক প্রতিবেশী শামিম বলেন, সামিয়া খাতুন ও সাদিয়া খাতুন জমজ এই দুইবোন আমাদের পুরো গ্রামের গর্ব। অভাব অনটনসহ নানা প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে নিজেদের অদম্য ইচ্ছে শক্তিতে এবারের এসএসসি পরিক্ষায় মিরপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছেন দু’জন। অর্থের অভাবে সামিয়া-সাদিয়া কখনো নিজেরা প্রাইভেট পড়তে না পারলেও তারা তাদের লেখা পড়ার সমস্ত খরচ জুগিয়েছেন বাড়ীতে বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়ানোর মাধ্যমে।

জমজ দু’বোন সামিয়া ও সাদিয়ার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নিজেদের সাফল্যে উচ্ছাসিত আমরা। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মায়ের সহযোগিতায় আমরা ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য আমরা সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা যেন আরও ভালো ফলাফল করে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি। আমরা সবার কাছে দোয়া চাই।

সামিয়া ও সাদিয়ার মা আসমা খাতুন বলেন, তিন মেয়েকে নিয়েই আমাদের সংসার। বড় মেয়ে নির্জনা আক্তার শনন ছিল মেধাবী ছাত্রী। এসএসসিতে শনন এ প্লাস পেয়ে বর্তমানে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। চরম প্রতিকুলতার মধ্যেও নিজেদের প্রচেষ্টায় মেয়েদের এমন সাফল্যে দারুন খুঁশি। মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের সহযোগীতাও চেয়েছেন তিনি।

জমজ দুই বোনের মামা আরিফুজ্জান জানান, প্রায় ১২বছর আগে মাথায় একটি আঘাত পেয়ে সামিয়া ও সাদিয়ার বাবা মানসিক রোগে ভুগছন। তাকে চিকিৎসা করেও কোন কাজ হয়নি। বর্তমানে মেয়ে আমার বোন ও ভাগিনারা টিউশনি করে সংসার চালান। তিনি আরও জানান, সামিয়া ডাক্তার হতে চাই এবং সাদিয়া প্রশাসনিক ক্যাডার হতে চাই।

এ বিষয়ে মিরপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশিদা বানু বলেন, অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা জমজ দুইবোন সামিয়া-সাদিয়ার এমন সাফল্যে অভিভুত স্কুলের শিক্ষকরা। তাদের উত্তর উত্তর সফলতা কামনা করেন তিনি।

মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাদের বলেন, শিক্ষায় জাতীর মেরুদন্ড, সু-শিক্ষিতরাই পারে একটি সুন্দর সমাজ গড়তে। তাই চরম প্রতিকুলতার মধ্যেও দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলা সামিয়া ও সাদিয়ার মেধা বিকাশে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা।