প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

যশোরাঞ্চলের চাষিদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে বারি সরিষা-১৮

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদনের জেলা যশোরে চাষিদের মাঝে সাড়া ফেলেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল বারি সরিষা-১৮। উন্নত জাতের এ সরিষা আবাদ করে ইতোমধ্যে ব্যাপক লাভবানও হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষক। প্রচলিত অন্য জাতের সরিষার চেয়ে বারি সরিষা-১৮’র ফলন বেশি হওয়ায় যশোরের পাশাপাশি দক্ষিণের জেলাগুলোতেও এ সরিষার আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরাঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোরাঞ্চলের আওতাভুক্ত ৬ জেলা যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এই ৬ জেলায় ৫ লাখ ৪০ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে যশোরে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সেটি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে চাষ হয়েছে ২৪ হাজার ৮৪৮ হেক্টর জমিতে। এসব সরিষার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সরিষার আবাদ হয়েছে বারি সরিষা-১৮।

যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. কাওসার উদ্দীন আহমেদ জানান, বারি সরিষা-১৮ জাতের এ সরিষা উন্নত জাতের কোলেস্টেরল বা ফ্যাটি অ্যাসিড (ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬) মানবদেহের জন্য উপকারী; যা সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া এ সরিষার ফলনও যেমন বেশি, ঠিক তেমন এর চাষ স্বল্প মেয়াদি। কৃষক সহজেই একই ক্ষেতে আমন আবাদ করে পরবর্তী সময়ে সেখানে সরিষা আবাদ করে আবার পাট চাষ করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া অন্যান্য জাতের সরিষার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ফলন হওয়ায় বারি সরিষা-১৮-এর চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষি। যশোরসহ এ অঞ্চলের ১০ জেলায় উন্নত জাতের এ সরিষার আবাদ হয়েছে বলে তিনি জানান।

ইউনুস আলী নামে এক কৃষক জানান, এক বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল বারি সরিষা-১৮ চাষে সব মিলে খরচ হয় চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমির উৎপাদিত সরিষা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করা সম্ভব। অল্প খরচে অধিক লাভ। এ সরিষা চাষে রোগবালাই তেমন হয় না। অন্য সরিষার চেয়ে অধিক ফলন হওয়ায় বারি সরিষা-১৮ চাষ করতে তারা আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি বিষয়ক প্রকল্পের সমন্বয়ক ড. ফেরদৌসী বেগম বলেন, বারি সরিষা-১৮ মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। এ তেলে উপকারী কোলেস্টেরল রয়েছে, যেটা মানবদেহের জন্য উপকারী। সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে বারি সরিষা-১৮ তেল আমরা ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। তিনি ভোজ্যতেলের বিদেশ নির্ভরতা কমাতে আমরা উন্নত জাতের সরিষা জাত উদ্ভাবন করে তা কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিচ্ছি। ইতোমধ্যে এ সরিষা আবাদে কৃষক পর্যায়ে যে সাড়া দেখা যাচ্ছে তাতে আগামীতে চাষিরা ব্যাপকভাবে চাষ করবে বলে তিনি আশা করেন।