প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন স্থগিত

শুক্রবার সকালে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরা -শেয়ার বিজ

প্রতিনিধি, যশোর : বহু প্রতিক্ষিত যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। দীর্ঘ আট বছর পর ৭ জানুয়ারি যশোরের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এ সংগঠনের নির্বাচনের কথা ছিল। ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ ও ব্যবসায়ী অধিকার পরিষদ নামে দুটি প্যানেল ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে প্রার্থীরা এক মাস ধরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে ভোটগ্রহণের মাত্র দুই দিন আগে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নির্বাচন বোর্ডের আহবায়ক সিনিয়র সহকারী কমিশনার কেএম আবু নওশাদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন।

কেএম আবু নওশাদ বলেন, নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্তের আগে আমরা দুই প্যানেলের প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করি। বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান, চেম্বারের প্রশাসক রফিকুল হাসানসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আলোচনা করে আদালতের আদেশ মেনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিতাদেশের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।

জানা গেছে, মেসার্স পারভেজ ট্রেডার্সের মালিক মেহেদী হাসান (ভোটার নম্বর-৬৪২) প্রকাশিত ভোটার তালিকায় তিনশোর বেশি ভোটারের হালনাগাদ কোনো আয়কর সনদ নেই। তারা আয়কর সনদের মূল কপি দাখিল না করে বেআইনিভাবে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, যা বেআইনি। এসব অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিলে সেটি গ্রহণ না করায় বুধবার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করলে বিচারক সুজাতা আমিন স্থগিত আদেশ ও বিবাদীদের এক কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে শুনানিতে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় আদালতের ওই আদেশের কপি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে অর্থাৎ জেলা প্রশাসনের নির্বাচন বোর্ডের কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পরে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নির্বাচন বোর্ডের আহবায়ক সিনিয়র সহকারী কমিশনার কেএম আবু নওশাদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন।

প্রসঙ্গত, যশোর চেম্বার অব কমার্সের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল। ওই নির্বাচনে জেলা বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন প্যানেল জয়ী হয়। ২০১২ সালের ৩ মার্চ মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন কমিটি দায়িত্ব বুঝে পায়। ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ওই বছরের ১২ জুলাই ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই নির্বাচন ভেস্তে যায়। ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। সেই থেকে একজন প্রশাসক প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপালন করছেন।

এদিকে, ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরা বিষয়টি সুবিধাভোগী কুচক্রী মহলের গভীর ষড়যন্ত্র বলে দাবি শুক্রবার সকালে প্রেসক্লাব যশোরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের অন্যতম প্রার্থী যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আলহাজ মিজানুর রহমান খান বলেন, শনিবার নির্ধারিত তারিখেই যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতার জন্য আমরা বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টার দিকে যশোর কালেক্টরেটে গিয়ে জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খানের সাথে দেখা করে সার্বিক বিষয় তুলে ধরি। এসময় জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে আইনী বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন বলে মিজানুর রহমান খান জানান। পরে চেম্বারের বর্তমান প্রশাসক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ বৈঠক চলাকালে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সকল প্রার্থীরা অপেক্ষায় ছিলাম। প্রায় চার ঘন্টা সেখানে অপেক্ষার পর রাত ৮টার কিছু পর আমাদেরকে নির্বাচন স্থগিতের বিষয়টি অবহিত করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক সহকারী কমিশনার কেএম আবু নওশাদ। তিনি বলেন, চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন নিয়ে এ ষড়যন্ত্র আমরা মেনে নিতে পারিনা।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীদের অভিযোগ নির্বাচনের পরাজয় নিশ্চিত জেনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের কতিপয় প্রার্থী ষড়যন্ত্র করে আদালতের মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তবে ষড়যন্ত্র যাই হোকনা কেনো নির্বাচন আয়োজনের জন্য তারা সর্বোচ্চ আইনী লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানান।

তবে অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন, ব্যবসায়ী অধিকার পরিষদের অন্যতম প্রার্থী হুমায়ূন কবির কবু। তিনি বলেন, নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাক এটি আমরা কামনা করিনা। আমরা চাই নির্বাচন হোক, ভোটাররা তাদের যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যিনি আদালতে মামলা করেছেন তিনি আমাদের ঘনিষ্টজন বলে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে এটি ঠিক না। যিনি মামলা করেছেন তাকে তিনি চেনেন না বলে জানান।