শেয়ার বিজ ডেস্ক : মিয়ানমারের জান্তা সরকারের আরও কয়েকজন সদস্য ও দেশটির জ্বালানি খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা। এবারই প্রথম দেশটির জ্বালানি খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। খবর: রয়টার্স।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের দুই বছর পূর্তি হয়েছে গতকাল বুধবার। দেশটিতে মাঝের সময়টা বেশ উত্তাল কেটেছে। অভ্যুত্থানবিরোধী তুমুল বিক্ষোভ ও তা দমাতে জান্তার দমন-পীড়নে দেশটিতে বদলে গেছে অনেকের জীবন। বিক্ষোভকারীদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে জান্তা সরকার। মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ দমন ও জান্তার হামলায় হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, জান্তার দমন-পীড়নে মিয়ানমারে প্রায় ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭০ হাজার মানুষ দেশ ছেড়েছেন। এসব কারণে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো। আনা হয়েছে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ। এত কিছুর পরও ভাগ্য ফেরেনি মিয়ানমারবাসীর। তাদের গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। বরং প্রায় প্রতিটি দিন তাদের কাটাতে হচ্ছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়, প্রাণ নিয়ে সংশয়ে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নোবেলজয়ী নেতা অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এ দখলের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে জান্তা সরকারের ওপর নতুন করে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এলো। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এদিন দেশটির ইউনিয়ন ইলেকশন কমিশন, খনি কোম্পানি, জ্বালানি বিষয়ক কর্মকর্তা এবং সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথম মিয়ানমার অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজের (এমওজিই) কর্মকর্তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য এদিন মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
যুক্তরাষ্ট্র এমওজিই-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এটি জান্তা সরকারের সর্বোচ্চ আয় করা মিয়ানমারের সরকারি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন দীর্ঘ দিন ধরে এমওজিই-র ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের তাগিদ দিয়ে আসছিল।
এদিকে জান্তা সরকার চলতি বছরের আগস্টের মধ্যে দেশটিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত শুক্রবার তারা এ ঘোষণা দেয়। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নিতে যোগ্য হতে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে কঠোর শর্ত বেঁধে দিয়েছে তারা। তার মধ্যে অন্যতম হলো—রাজনীতিতে বৃহৎ আকারে সেনাসদস্যদের অন্তর্ভুক্তি। যাতে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই থাকে এবং বিরোধীরা সবসময় কোণঠাসা থাকে। তারা যেসব নিয়ম বেঁধে দিয়েছে তার সবই সাবেক জেনারেলদের নিয়ে গঠিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির পক্ষে গেছে। ২০১৫ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে এ দলটিকে ধরাশায়ী করে ক্ষমতায় গিয়েছিল সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি।
গত বছরে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভয়াবহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় দেশটির জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তখন জান্তা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২২ ব্যক্তি ও ৪ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিজেদের ওয়েবসাইটে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে জানায় ইইউ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যে ২২ জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, জাতীয় প্রশাসনিক কাউন্সিলের একজন সদস্য, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন সদস্য ও সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা রয়েছেন। এ জোটের নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর আর্থিক সম্পর্ক অথবা সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো—এইচটু গ্রুপ, আইজিই (ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ অব এন্ট্রাপ্রেনিউরস), মাইনিং এন্টারপ্রাইজ ১ (এমই ১) ও মায়নমা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজ (এমওজিই)। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর চার ধাপে ৬৫ জন ব্যক্তি ও ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ।