প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রি আট মাসে সর্বোচ্চ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রি অক্টোবরে আট মাসে সর্বোচ্চ বেড়েছে। অর্থনৈতিক দুর্দশা  এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বিক্রি বেড়েছে। খবর: ব্ল–মবার্গ।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে স্থবির হওয়ার পর সামগ্রিক খুচরা ক্রয়ের মূল্য গত মাসে ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। পেট্রোল ও গাড়ি বাদে খুচরা বিক্রয় শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির জন্য পরিসংখ্যান সমন্বয় করা হয়নি। ব্ল–মবার্গের জরিপে অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস করেছিলেন, খুচরা বিক্রি ১ শতাংশ বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খুচরা ১৩টি ক্যাটেগরির মধ্যে বিক্রি বাড়ে ৯টির। এর মধ্যে রয়েছে অটো ডিলার, মুদি পণ্য ও রেস্তোরাঁ। গ্যাস স্টেশনে বিক্রি বেড়েছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ।

তথ্যে দেখা গেছে, ভোক্তাব্যয় বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চতুর্থ প্রান্তিকে অর্থনীতি ভালো অবস্থানে যেতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেডের নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি নাও আসতে পারে। আসছে মাসগুলোয় তাই সুদহার ধীরগতি করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু নীতিনির্ধারকদের মতে, মূল্যস্ফীতি এখনও তুলনামূলক বেশি।

ভোক্তা ও উৎপাদক মূল্য উভয়ই গত মাসের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে। স্টক ও বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী ডিসেম্বরে সুদহার কমাতে পারে ফেড। বুধবারের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা গেছে, দুই বছরে রাজস্ব আয় বেড়েছে এবং পুঁজিবাজারে কমেছে সূচক ও লেনদেন। এমনকি কয়েকটি পণ্যের দাম কমলেও খুচরা বিক্রেতারা তাদের আয়ে মূল্যস্ফীতির প্রভাব দেখছেন। শেষ প্রান্তিকে হোম ডিপো করপোরেশনের মুনাফা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হয়েছে। তবে মোট লেনদেনের চেয়ে বেশি মূল্যের কারণে তাদের মুনাফা বেড়েছে। ওয়ালমার্ট ইনকরপোরেশন পুরো বছর ক্রেতা ধরতে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তারা বছরজুড়ে মূল্যহ্রাসের অফার দিচ্ছে। এ কারণে ক্রেতা সমাগত বেশি হচ্ছে।

একই সময় টার্গেট করপোরেশন সতর্ক করে জানিয়েছে, ক্রেতারা কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রায়ান কর্নেল জানিয়েছেন, ক্রেতাদের আচরণে মূল্যস্ফীতির প্রভাব স্পস্ট। ক্রমবর্ধমান সুদহার ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে তাদের কেনাকাটায়।

ব্ল–মবার্গের অর্থনীতিবিদ এলিজা উইঙ্গার ও অ্যান্ড্র হাসবি বলেন, চতুর্থ প্রান্তিকের শুরু থেকে ক্রেতারা কেনাকাটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ কারণে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বিক্রির আশা করছেন খুচরা বিক্রেতারা। বিশেষ করে এ প্রান্তিকে অটো ও গ্যাসোলিনের বিক্রি বেড়েছে। ২০২৩ সালের শুরুতে ক্রেতারা একই অবস্থা ধরে রাখবেন এবং এজন্য ফেডের উচিত সুদহার কমানো।

অনেক ক্রেতা ছুটির মৌসুমে মূল্যছাড়ে কেনাকাটা করেন। এ সময় পোশাকের দোকানগুলোর চেয়ে ডিপার্টমেন্ট স্টোরে কেনাকাটা ২ দশমিক ১ শতাংশ কমতে পারে বলে ব্ল–মবার্গের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। অন্য ক্যাটেগরির মধ্যে ইলেকট্রনিকস ও খেলাধুলার সামগ্রী ক্রয়ও কমেছে। ক্রেতাদের চাহিদা না থাকায় এসব ক্যাটেগরির পণ্য বিক্রি কমেছে।

গত আট মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে মোটর গাড়ি বিক্রি ও ডিলারশিপে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রি অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পায়। তখন আশঙ্কা করা হয়েছিল, সরবরাহ ঘাটতির কারণে ছুটির মৌসুমে কেনাকাটায় ব্যাহত হতে পারে। সেপ্টেম্বরে খুচরা বিক্রি বাড়ে শূন্য দশমিক সাত শতাংশ। আগস্টেও খুচরা বিক্রি একই ছিল। কিন্তু আগস্টে তথ্য সংশোধনের পর তা বেড়ে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ দেখানো হয়। অন্যদিকে সেপ্টেম্বরে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) শূন্য দশমিক চার শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তখন বাড়ে শূন্য দশমিক চার শতাংশ। তার আগের মাস আগস্টেও বেড়েছিল শূন্য দশমিক তিন শতাংশ। সব মিলিয়ে গত ১২ মাসে দেশটির সিপিআই বেড়ে পাঁচ দশমিক চার শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০০৮ সালের পর গত ১৩ বছরে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি।