প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

‘রংপুরে এখন ক্ষুদ্র, মাঝারি বা ভারী শিল্প গড়ে তোলার উপযুক্ত সময়’

প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রংপুর শহরকেন্দ্রিক তেমন কোনো শিল্প, কল-কারখানা গড়ে না ওঠায় অঞ্চলটি পিছিয়ে রয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এ অঞ্চলের জন্য শিল্প, কল-কারখানা গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা থাকলেও নানা কারণে উদ্যোগ না নেওয়ায় অবহেলিত এই জনপদ। এ অবস্থা থেকে মুক্তি চান যুবকরা। অঞ্চলটিকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা। সেসব যুবকের একজন ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল ইসলাম রতন জীবনের সাফল্যগাথা জানিয়েছেন শেয়ার বিজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রংপুর প্রতিনিধি নুর আলম

শেয়ার বিজ: আপনার উদ্যোগের শুরুটা জানতে চাই…

মঞ্জুরুল ইসলাম রতন: লেখাপড়ার পাঠ শেষ না হতেই ২০১১ সালে এমইপি গ্রুপ কোম্পানিতে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মজীবন শুরু করি। পর্যায়ক্রমে প্রমোশন পেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে ডেপুটি ডাইরেক্টরের দায়িত্ব পালন করি। সেখান থেকেই মাথায় আসে রংপুরে একটি ইন্ডাস্ট্রি করা যায় কিনা। চাকরি ছেড়ে চার বন্ধু মিলে রংপুর নগরীর আশরতপুর এলাকায় স্পার্কি ইলেকট্রনিকস লিমিটেড নামে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করি। শুরুতে পুঁজি নিয়ে টানাটানি ছিল। সাহস করে বন্ধু মুনতাসির, ফকরুল ইসলাম ও তারিকের সঙ্গে পরামর্শ করলাম কীভাবে রংপুরে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে। আমার দৃঢ় মনোবল ও সাহস দেখে তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। মাত্র ৪০ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে আমাদের পথচলা। এরপর ব্যাংক থেকে আরও ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিই। মাত্র ২০ শতক জায়গায় মানসম্মত কারখানা নির্মাণ করে বিদেশ থেকে ইলেকট্রনিকস কাঁচামাল আমদানি করে এখানে সংযোজন করে আন্তর্জাতিক মানের ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদন করছি। দিন দিন আমাদের তৈরি পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।

শেয়ার বিজ: ব্যক্তিগত কোন বিষয়গুলো শেয়ার করতে চান?

মঞ্জুরুল ইসলাম: স্পার্কি ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও সিইও আমি। রংপুর চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। রাজধানীর আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস বিভাগ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছি। ২০১০ সালে এ বিষয়ের ওপর একটি প্রজেক্ট কম্পিটিশনে অংশ নিয়েছিলাম। পরে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

শেয়ার বিজ: একজন উদ্যোক্তাকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয়?

মঞ্জুরুল ইসলাম: আমাদের দেশে সরকার থেকে শুরু করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাকে উৎসাহিত করতে আন্তরিকতার অভাব দেখা যায়। আমাদের পুঁজি সমস্যার সমাধানে বলতে গেলে কেউই পাশে থাকে না। তাই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য হয়রানির শিকার হতে হয়। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ও আর্থিক সহযোগিতা নিতে গিয়ে অনেক উদ্যোক্তা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি শিল্পোদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ পেতে সহায়তা করত কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করত, তা হলে রংপুরে ছোট-বড় অনেক শিল্প, কল-কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যা মাইলফলক হয়ে দাঁড়াতে পারে।

শেয়ার বিজ: রংপুরে শিল্প, কল-কারখানা গড়ে তুলতে যুবসমাজের ভূমিকা কতটুকু?

মঞ্জুরুল ইসলাম: ক্ষুদ্র, মাঝারি বা ভারী শিল্প গড়ে তোলার জন্য বর্তমানে রংপুর অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য পরিবেশ বিদ্যমান। দরকার শুধু সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ। সে সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। শিক্ষিত বেকার যুবকদের নিয়ে সমবায়ের ভিত্তিতে শিল্প, কল-কারখানা গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বণিক সংগঠনগুলো অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে পারে। কেননা, এ অঞ্চলে সস্তা শ্রমবাজার থাকায় গার্মেন্টশিল্প, কৃষিভিত্তিক কল-কারখানা নির্মাণের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বেকার যুবকরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সৎ ও সাহস এবং লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সাফল্য পাবে। তথ্য-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব।

শেয়ার বিজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মঞ্জুরুল ইসলাম: অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের বেকার সমস্যা নিরসন করা। শিল্পাঞ্চল হিসেবে রংপুরকে প্রতিষ্ঠা করতে নগরীর আশরতপুর এলাকায় গড়ে ওঠা স্পার্কি ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের আরেকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা হলো আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ববাজারে আমাদের ইলেকট্রনিকস পণ্য ছড়িয়ে দেওয়া। আমাদের দেশের বাজার মূলত চীন, কোরিয়া ও ভারতের দখলে। তবে আমরা মনে করি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় আমরা স্পার্কি ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য রফতানি করতে পারব। হ