হুমায়ুন কবীর মানিক, রংপুর: সবজিতে ভরা রংপুরের হাটবাজার। তারপরও দাম কমছে না। রংপুর মহানগরীসহ জেলার পীরগঞ্জ, খালাশপীর, মিঠাপুকুর, শঠিবাড়ী, সদরের পালিচড়া, খোড়াগাছ, শ্যামপুর ও পীরগাছার বাজারে সবজির কমতি নেই। দোকানে থরে থরে সাজানো নানা পদের সবজি কিন্তু উৎপাদন অনুযায়ী দাম যেখানে কমার কথা, সেখানেই বাড়ছে সবজির দাম। অভিযোগ রয়েছে, সবজিবাজার নিয়ন্ত্রণ করে একটি সিন্ডিকেট। কৃষকদের জমি থেকে সবজি ওঠানোর পরই বাজারে ঢুকতেই হাতবদল হতে হতে সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। সংশ্লিষ্টরা বার বার বাজার মনিটরিংয়ের কথা বললেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। ফলে শীতকালের সবজি চড়াদামেই কিনছেন ক্রেতারা।
শুক্রবার সকালে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাটে কথা হয় যাদবপুরের কৃষক হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। তিনি জানান, বিক্রির জন্য ২০ মণ বেগুন নিয়ে এসেছেন। প্রতিমণ হাইব্রিড কিং বেগুন ৬০০ টাকা, সিংনাথ ৪৮০ টাকা ও সলেয়া বেগুন ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। অথচ মাত্র দুই হাত ঘুরেই সেই বেগুন ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। মাঝের দুই হাতেই বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম। এ দুই হাত হচ্ছে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ী। এতেই মাত্র ১৫ টাকার বেগুনের দাম হয়ে যাচ্ছে ২৫-৩০ টাকা। অর্থাৎ এক হাতেই বেড়ে গেল কেজিতে ১০-১৫ টাকা। কেবল বেগুনই নয়, শিম, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, পটোল, লাউ, ধনেপাতা, নতুন আলু থেকে শুরু করে গাজর, বরবটিসহ প্রতিটি সবজির দাম এখন উৎপাদনমূল্যের চেয়ে ভোক্তামূল্যের ব্যবধান হয়ে যাচ্ছে দিগুণ। কৃষকও যেমন ভালো দাম পাচ্ছে না, তেমনি ভোক্তাও কম দামে সবজি কিনতে পারছেন না। মাঝ থেকে প্রচুর মুনাফা তুলে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী।
জায়গীরহাটে কথা হয় অভিরাম নূরপুরের খুচরো ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান মণ্ডল ও পীরগাছার পারুল দেউতির ফুলমিয়ার সঙ্গে কথা হলে জানান, তারা ১৫ টাকা দরে বেগুন কিনেছেন। আর বিক্রি করছেন ২৫-৩০ টাকায়। ১৫ টাকায় আপনারা কিনেছেন কিন্তু ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি করছেন কেন জানতে চাইলে বলেন, দোকান ভাড়া থেকে শুরু করে সব ধরনের খরচ রয়েছে ৫ টাকার মতো, আর কেজিতে ৫ টাকা লাভ রেখে আমরা বিক্রি করছি।
ঠিক একই ধরনের কথা বললেন রানীপুকুর দৌলত রসুলপুরের রেজওয়ান আলী। তিনিও সঠিক ক্রয়মূল্য গোপন করে বললেন, প্রতি কেজি বেগুন পাইকারদের কাছ থেকে কিনেছেন ১৫ টাকায়, আর বিক্রি করছেন ২৫-৩০ টাকায়। আসলে সত্যটা গোপন করে পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে তুলে নিচ্ছেন অতিরিক্ত মুনাফা।
আর ঠকতে হচ্ছে সবজির উৎপাদক তথা কৃষক এবং ভোক্তাকে। ভরা মৌসুমে কম দামে সবজি কেনার আশা থাকলেও তা পেয়ে হতাশ ক্রেতারা। ক্রেতারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি।
রংপুর সিটি বাজারের সবজি ক্রেতা আশরাফুল আলম, মনিরুল ইসলাম মিন্টু, হারুনুর রশিদ বাদশাসহ কয়েকজন জানান, বাজারের কোনো দোকানেই কিন্তু সবজির কমতি নেই। তাহলে দাম কেন এত চড়া হবে। এখন সবজির ভরা মৌসুম। এখন ১০ থেকে ১৫ টাকার ওপরে কোনো সবজির দাম হওয়া কাম্য নয়। কিন্তু ২৫ থেকে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। এতে হতাশ হলেও আমাদের কিনতে হচ্ছে। কারণ সংসারে তো প্রতিদিনই দরকার পড়ে এসব সবজি। না কিনে তো আর উপায় নেই।
রংপুর সিটি বাজার, কামালকাছনা, মহিগঞ্জ, ধাপ বাজার, মডার্ন মোড় ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায় এবং টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রতি কেজি শিম প্রকারভেদে ২৮ থেকে ৪০, করলা ৩০, শসা ৪০, মুলা ১৫, বরবটি ২০-২৫, পটোল ১৫ থেকে ২০, পুরনো আলু ২৫-৩০, নতুন আলু ৪০ থেকে ৫০ এবং পেঁপে ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ফুলকপি ২০-২৫, বাঁধাকপি ১৫-২০, কাঁচকলা প্রতি হালি ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবু প্রতি হালি ২০, পালংশাকের আঁটি ১০, লালশাক ১০, পুঁইশাক ১০-১২, নাপাশাক ১০, মুলাশাক ৫-৬ ও লাউশাক ৮-১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৩২-৪০, ভারতীয় ২৫, দেশি আদা ১৮০, দেশি রসুন ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রংপুর চেম্বার প্রেসিডেন্ট আবুল কাশেম বলেন, এলাকাভিত্তিক জনগোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ী সবজির চাষ হয় না। ফলে বড় পাইকাররা বাজারে মূল্য বাড়িয়ে দেন। স্থানীয় পাইকাররা তেমন তাল পান না। বাজার ব্যবস্থাপনায় মনিটরিং প্রয়োজন। সে সঙ্গে কৃষক যেন বাজারে নিজে বিক্রি করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা উচিত।