নিজস্ব প্রতিবেদক: সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি সাত শতাংশ কমার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, রপ্তানি কমার বিষয়টাতে আমিও একটা ধাক্কা খেয়েছি। আমার কাছে ভালো লাগেনি। আমিও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। এই খাতের ওপর সিনিয়র লেভেলের ব্যবসায়ীদের সাথে আমি কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আগামী মাসের মধ্যেই এটা ঘুরে আসবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘ম্যান-মেড ফাইবার ফর মুভিং আপ দ্য ভ্যালুচেইন অব আরএমজি ইন দ্য কনটেস্ট অব এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূর মোহাম্মদ মেজবাউল হক এবং বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমি ওপর লেভেলের ব্যবসায়ীদের কাছে কেন এটা হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণেই এটা হয়েছে। বায়াররাও বুঝতে পারছেন না কোথায় চাহিদা রয়েছে। তবে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, এই পরিস্থিতি থেকে শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে। আমিও সেটা বিশ্বাস করি। কারণ শেষ বিচার যতই যুদ্ধ চলুক, মানুষকে তো কাপড় পরতেই হবে। তাই মানুষকে কাপড় পরতে হলে ব্যবসা তার নিজের পথ খুঁজে পাবে।
তবে একটা আশঙ্কার বিষয় উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা কাপড়ের বাজারের যে অংশে আছি, এই অংশটা স্কুইজ হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। হাতে তৈরি বা কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহার বাজার অনেক বড়, যেটা আমার জানা ছিল না। আজকের এ প্রোগ্রাম থেকে এটা জানলাম। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে এই যে, এই কৃত্রিম তন্তুর বাজারে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। অতিতাড়াতাড়ি আমরা এখানে যদি ট্রানজিশনের ব্যবস্থা না করি, তাহলে আমাদের চেয়ে এখন একটা এডভান্টেজ আছে কটনে, সেটা হয়তো টিকবে না। সুতরাং আলোচনা হচ্ছে কীভাবে ট্রানজিট করা যায়।
তিনি বলেন, তবে এই ট্রানজিশনে অত বেশি টাকা লাগবে না। বর্তমানে যেসব যন্ত্র দিয়ে কটন তৈরি করা হয় বা কাপড় তৈরি করা হয়, সেখানে আরও কিছু ইনভেস্ট করলেই কৃত্রিম তন্তুতে যাওয়া যাবে। তারা যে দাবি তুলেছেন, সেটা অত্যন্ত সংগত। তারা টাকা চাননি, চেয়েছেন নীতি-সহায়তা। কীভাবে কম শুল্কে আনা যায়, সেটা উচ্চ মহলে আলোচনা চলছে। আশা করছি একটা ভালো ফলাফল আসবে।
ম্যান-মেড ফাইবারে ১০% ক্যাশ ইনসেন্টিভ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমি এখানে দেয়ার কেউ নই। এটা নিয়ে আলোচনা হবে। এই ক্যাশ ইনসেন্টিভ দেয়ার বিষয়টি সবার সাথে বসে এনবিআর ঠিক করবে। আমি এর পক্ষে। তবে আমার মতে ইনসেনটিভের বাজার ফেয়ার হওয়া উচিত। কেউ পাচ্ছে না, কেউ বেশি পেয়ে গেল এটা হওয়া উচিত নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইনসেন্টিভ ইকোনমিতে বিশ্বাসী নই। তবে আমার সরকার যেটা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা অবশ্যই আমি প্রতিপালন করব। সরকার বহু বছর যাবৎ এখানে-ওখানে ইনসেন্টিভ দিয়ে আসছে। এটা একটা অন্তর্নিহিত ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এর কায়েমি স্বার্থ আছে। ব্যবসা শেষ হয়ে গেছে, তারপরও ইনসেন্টিভ রয়ে গেছে এমনও মাঝে মাঝে শুনি।
এলডিসি-পরবর্তী জটিলতা নিয়ে তিনি বলেন, এলডিসি-পরবর্তীতে বেশি জটিলতা হলো আমাদের এ মুহূর্তে বাজারে সমস্যা। এলডিসি-পরবর্তীতে সবাই যে সুবিধা পাবে, আমরাও সেটা পাব। এখন যেটা হচ্ছে, এলডিসি-পরবর্তীতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি করবে না করবে, সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। এসব বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে কীভাবে এটাকে পাশ কাটিয়ে এগোনো যায়।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মূল্যস্ফীতির মূল বার্তা হচ্ছে কমেছে এবং ভালো পরিমাণে কমেছে। একজন ভোক্তা হিসেবে বলতে পারি, এ মাসে আরও কমবে। এক্সাক্ট ফিগার আমি অতিশিগগিরই আপনাদের দেব।
এনবিআর কর্তৃক ব্যবসায়ীদের হয়রানির বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমিও তো এই দেশের বাসিন্দা। আমি তো সবার খোঁজ-খবর রাখি। তবে আমি সরাসরি কাউকে হয়রানি করতে দেখিনি।