উৎসব-পার্বণ উপলক্ষে সব দেশেই কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে। ওই পণ্যগুলো নিছক উপহারের পণ্য, নিত্যপণ্য নয়। ওই পণ্য প্রতিদিন কেনা হয় না। কেবল বিশেষ দিনেই কেনা হয়। তাই ওই পণ্যগুলোর দাম বাড়লেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে না। এদিক দিয়ে আমাদের দেশ ভিন্নতর। দামি বিলাসী পণ্য নয়, সুযোগ পেলেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। প্রতি বছর রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকবে। পণ্য আমদানি ও সরবরাহের সঙ্গে সমন্বয় করে যে দাম নির্ধারণ করা হবে, তা খুচরা বাজারে যাতে মেনে চলা হয়, সেজন্য মনিটরিং থাকবে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও এমনভাবে কিছু বিষয় তুলে ধরেন, যেন তাদের সত্যিই করার কিছু ছিল না। তারা সময়মতো এলসি নিষ্পত্তি করতে পারেননি। অনেক সময় তারা রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে বিপাকে পড়েন ভোক্তারা। এবারও সে ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে এ ধরনের পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার শর্তাবলি সহজ করার বিষয় বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) ২০২৩ সালে সংগঠনটির কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
রমজানে যেসব পণ্য বেশি প্রয়োজন, যেমন ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, খেজুর, ডাল প্রভৃতি আমদানিতে এবং ব্যাংকগুলো যেন এসব নিত্যপণ্যের এলসি খোলার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়, সে লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। রোজার আর দুই মাস বাকি। সমন্বিত পদক্ষেপ নিলে রমজান মাসে নিত্যপণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকবে বলেই ধারণা।
আমদানি করার জন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে গতি আনতে হবে, যাতে রোজার কয়েক দিন আগেই পণ্য খালাস এবং দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ করা যায়। অবশ্য দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ক্রেতারাও অতিরিক্ত পণ্য কিনে মজুত করেন এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুত করে রাখেন, এমন অপ্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধর্মবিশ্বাস মতে, রমজান সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস। পবিত্র এই মাসে ধর্মপ্রাণ ব্যবসায়ীরা ধর্মকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। তাদের কর্মীরা ধর্মের অনুশাসন মেনে ব্যবসা করলে সেটিও পুণ্য হিসেবে গণ্য হবে। বাজারব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি যোগসাজশের মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত করা হলে ভোক্তাস্বার্থের হানি ঘটে, অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও পড়ে এর বিরূপ প্রভাব। উদার বাণিজ্য ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাজারের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করলে তা রোধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। আসন্ন রমজানে যাতে নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকে, সেজন্য সরকারকে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।