ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে সাওম বা রোজা হচ্ছে তৃতীয় স্তম্ভ। এটা সমগ্র মুসলিম জাতির কাছে যুগ যুগ ধরে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসে। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাস এটি। রমজান মাসে সমগ্র মুসলিম জাতি নিজেদের বিভিন্ন পাপ থেকে মুক্ত রেখে মহান আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকেন বা থাকার চেষ্টা করেন। অশেষ লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ ও উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ ভুলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। এ মাসে বান্দার আমলের সওয়ার অন্যান্য মাসের চেয়ে বহুগুণে (সর্বনি¤œ ৭০) বেড়ে যায়। এককথায় এ মাসটি হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে একটি শ্রেষ্ঠ উপহার। সাওম বা রোজা একটি ফরজ ইবাদত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণীÑ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা (রমজানের সাওম) ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ (সুরা আল বাকারা: ১৮৩)।
রমজানের অনুপম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ মাসে মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হয়েছে। মহান আল্লাহ সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ওহির মাধ্যমে আমাদের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর এ কিতাব নাজিল করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণীÑ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত ও সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী।’ (সুরা আল বাকারা: ১৮৫)।
বছরের অন্যান্য মাসে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ভুল-ভ্রান্তির পরিমাণ বেশি হলেও রমজানে যেন আমরা খুব সতর্কতা অবলম্বন করি। অথচ আমাদের উচিত হচ্ছে, শুধু রমজান নয়, বরং সারাবছর বিভিন্ন ভুল-ভ্রান্তি, পাপ ও নানা অপকর্মে নিয়োজিত না থাকা। রমজান সত্যিকারার্থে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে মহান প্রভুর কাছাকাছি অবস্থানে নিয়ে আসে। ইসলামের নীতিমালা খুব সহজে মান্য করতে চেষ্টা করে। নিয়মিত আমল করার প্রয়াসে মশগুল থাকে। রমজানে একজন মুসলিম ইচ্ছা করলে সুন্দর জীবনযাপন করার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। যেমনÑনিয়মিত পবিত্র কোরআন শরিফ তেলাওয়াত, হাদিস পাঠ, অধিক পরিমাণে বিভিন্ন দোয়া-দরুদ পাঠ করা, অত্যধিক জিকির করা কিংবা অবসরে বিভিন্ন ইসলামিক বই পড়ে সময় অতিবাহিত করতে করা।
অগণিত সওয়াবের মাস রমজানে কেউ যদি এক টাকা দান করলে সেটার সওয়াবের পরিমাণ প্রায় ৭০ গুণেরও বেশি। রমজানে একজন সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য গরিব, অসহায় বা অসচ্ছল রোজাদারকে ইফতার করানোও উত্তম কাজ। একজন রোজাদারকে ইফতার করালে অধিক সওয়ার পাওয়া সম্ভব। রমজানে দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রে আমরা সাম্যের সমাজ বিনির্মাণে অবদান রাখতে পারি। তবে রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন পাড়া বা মহল্লায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বিশেষভাবে সহায়তামূলক কার্যক্রম করে থাকে, যা অনেক প্রশংসনীয় কাজ। প্রতিটি এলাকা বা মহল্লায় এমন সহযোগিতামূলক কার্যক্রম চলমান থাকা জরুরি। সমাজের গরিব ও অসহায় পরিবারের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
প্রকৃতপক্ষে দেখা যায়, আমরা শুধু রমজান মাস এলেই একটু ধর্মের নিয়ম-নীতি মেনে চলি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পাশাপাশি রোজা, ইফতার, সাহরি ও রাতে তারাবির নামাজ এসবে অধিক মনোযোগী হই। আর রমজান শেষে বেমালুম ভুলে যাই সবকিছু। এটা কোনোভাবেই উচিত নয়। রমজান মাস আমাদের কাছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসে। আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে হলে রমজানের গুরুত্ব বুঝতে হবে। রমজানের অধিক গুরুত্ব আমাদের সুন্দর জীবন গঠনে ভূমিকা রাখে। রমজানের গুরুত্ব প্রসঙ্গে হাদিসের বর্ণনা ব্যাপক। যেমন বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে যা বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোকে মুছে দেয়, যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (মুসলিম-২৩৩)।
অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায়, রমজান মাস আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য বড় রহমতের মাস। এ মাসে বান্দা ইবাদতের মাধ্যম মহান প্রভুর নৈকট্য বা সন্তুষ্টি অর্জন করে থাকেন। রমজানকে ‘ইবাদতের বসন্ত’ বলা হয়। রমজানের আগমন আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থে জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে সহায়তা করে। সুতরাং আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের অন্যতম মাস হচ্ছে এ পবিত্র মাহে রামাদান। রমজানের নেক আমলের দ্বারা সুন্দর হোক সবার জীবন। সেইসঙ্গে ইহকাল ও পরকালের নাজাত (মুক্তি) নিশ্চিত হোক।
আকিব হোসাইন
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ