প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

রহিমা ফুডের শেয়ারদর আড়াই মাসে তিনগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: লোকসানি কোম্পানি রহিমা ফুডের শেয়ারদর বাড়ছেই। আড়াই মাসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। একদিকে লোকসান, অন্যদিকে দর বাড়ার কারণ সম্পর্কে তদন্ত চলছে। তবু দর বাড়ায় কোম্পানির শেয়ারদর অতিমূল্যায়িত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অতিমূল্যায়িত হওয়া শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গত ৪ অক্টোবর রহিমা ফুডের শেয়ারদর ছিল ৫১ টাকা ২০ পয়সা। দর বেড়ে চলতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১৪৯ টাকা ৫০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। অর্থাৎ আড়াই মাসে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ১৯২ শতাংশ। তবে গতকাল রোববার কোম্পানির শেয়ারদর ১ দশমিক ০৫ শতাংশ কমেছে। কখনও দুয়েকদিন কমলেও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারদর বাড়তে থাকে। মাঝে মধ্যে দর বেড়ে সার্কিট ব্রেকার স্পর্শ করছে। এভাবে টানা দর বাড়ায় কোম্পানির শেয়ারটি অতিমূল্যায়িত হচ্ছে।

তারা আরও বলছেন, অতীতে অনেক কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত হতে দেখা গেছে। এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেশি।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি এমএ হাফিজ বলেন, বাজারে স্বাভাবিক বিনিয়োগের পরিবেশ বিরাজ করছে। এ বাজারে কোনো কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত হলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে বুঝেশুনে সচেতনভাবে বিনিয়োগ করা উচিত।’ বিনিয়োগকারীদের হুজুগে শেয়ার না কেনার পরামর্শ দেন তিনি।

তথ্যমতে, চলতি সপ্তাহে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। বার্ষিক সাধারণ সভায় কী ধরনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে, সেদিকে তাকিয়ে আছেন বিনিয়োগকারীরা। এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ না হওয়ায় কী কারণে শেয়ারদর বাড়ছে, কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রি হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইতে দেওয়া তথ্যমতে, কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কোম্পানিটি লোকসানে পড়ে ২০১৪ সাল থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানির ঋণের পরিমাণ ১০৫ কোটি ৫ লাখ টাকা।

১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারসংখ্যা ২ কোটি। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে ৪৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫ দশমিক ০৬ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫ দশমিক ০১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার রয়েছে ৪০ দশমিক ২৩ শতাংশ।

উল্লেখ্য, লোকসানের পাশাপাশি ঋণে জর্জরিত হয়ে কোম্পানিটির পরিচালকদের হাতে থাকা ১ কোটি ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৭০টি শেয়ার সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে হস্তান্তরের জন্য গত ১৬ অক্টোবর সিদ্ধান্ত নেয় পর্ষদ। বিষয়টি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। অথচ একদিন পর ডিএসইতে তা প্রকাশ করা হয়। দেরিতে তথ্যটি প্রকাশ করা নিয়ে কোম্পানি ও ডিএসই পরস্পরকে দোষারোপ করে। অন্যদিকে কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে থাকে। এ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গত ১৯ অক্টোবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, যার প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।