প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

রাজনীতিতে পুঁজির আধিপত্য বন্ধ হোক

রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত দুদিনব্যাপী সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের একটি অধিবেশনে বক্তারা বলেছেন, সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব সব সময়ই ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে জাতীয় সংসদের ৫৬ শতাংশ সদস্যের পেশা ব্যবসা। আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেছেন, দেশে পুঁজিবাদের বিকাশে এক ধরনের লুণ্ঠনের সংস্কৃতি জড়িত। এই লুণ্ঠন শুরু হয় স্বাধীনতার পর। ওই সময় একটি শ্রেণি পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখল করে ধনী হয়েছে। এরপর বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলো থেকে নানা কৌশলে অর্থ সরিয়ে নিয়ে একটি গোষ্ঠী অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে একটি শ্রেণি পুঁজিপতি হয়ে উঠেছে। এসব পুঁজিপতি শ্রেণি পরে রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়ে বিভিন্ন নীতি প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার করছে।

ধনাঢ্য ব্যক্তিরা শুধু টাকার জোরেই সংসদ সদস্য হন। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের (রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সদরের আংশিক) সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের কথা আমাদের মনে আছে। স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও একইভাবে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করেন তিনি। পরে কুয়েতে মানব পাচারে দণ্ডিত হন শহিদ ইসলাম। কুয়েতে আটক হওয়ার পর জানা যায়, তার অঢেল টাকার উৎস ভিসাবাণিজ্য ও মানব পাচার। কুয়েত কর্তৃপক্ষ ওই সময় সে দেশের ব্যাংকে থাকা এই এমপির ১৩৮ কোটি টাকা জব্দ করে। তবে বিদেশে থাকা অর্থসম্পদের কথা শহিদ ইসলাম ভোটের আগে ইসিতে জমা দেয়া হলফনামায় উল্লেখ করেননি।

রাজনীতিতে পুঁজির আধিপত্য সব সময়ই  কমবেশি ছিল। নির্বাচনে জিততে মরিয়া হয়ে ওঠে রাজনৈতিক দলগুলো। অর্থবিত্তে যিনি এগিয়ে, দলের তহবিলে যিনি মোটা অঙ্কের অনুদান দিতে পারেন; তিনিই মানোনয়ন বাগিয়ে নেন। কক্সবাজারের আবদুর রহমান বদির কথাও গণমাধ্যমের কল্যাণে সবাই জানেন। আসন নিয়ে দরকষাকষির পর্যায়ে কে মনোনয়ন বাগিয়ে নেয়, সেটি থাকে অজানা। যারা ঋণখেলাপি তারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। কিন্তু ঋণখেলাপিদেরও কৌশলে প্রার্থী করার সুযোগ দেয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, ধনাঢ্য অনুপ্রবেশকারীকে ‘নিবেদিতপ্রাণ নেতা ও সক্রিয় মাঠপর্যায়ের কর্মী’ উল্লেখ করে দলীয় কর্মীদের তাদের ভোট দেয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানোর দৃষ্টান্তও আছে। যদিও সাধারণ মানুষের কেউ মনে করেন ধনাঢ্য ব্যক্তি নির্বাচিত হলে চুরি করবেন না। কিন্তু পরে দেখা যায়। নিজের আখের গোছানোর কাজেই ব্যস্ত তিনি। তার ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে ওঠে। কোনো কোনো আসনের এমন প্রার্থীও দেয়া হয়, যাকে দলীয় নেতাকর্মীরা মেনে নেন না। এ অবস্থায় নির্বাচনে প্রার্থী সরানো, ভোটের মাঠ নিয়ন্ত্রণ করা থেকে জয়ী হওয়া পর্যন্ত প্রার্থীকে ঘাটে ঘাটে নেতাকর্মীদের সন্তুষ্ট করতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে। রাজনীতিতে নৈতিকতা, স্বচ্ছতা, জনপ্রিয় ব্যক্তিকে আনতে হলে অর্থের বিবেচনায় মানোনয়ন দেয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অসৎ ও অযোগ্য ব্যক্তিকে এমপি নির্বাচিত করে বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। এ ধরনের উদাহরণ কম নয়। রাজনীতিতে পুঁজির আধিপত্য বন্ধ করা গেলে এ ধরনের ঘটনা কমবে।