প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

রাজনীতি করতে পারবেন না ইসলামী ব্যাংকের কর্মীরা: আরাস্তু খান

নিজম্ব প্রতিবেদক: কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যুক্ত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলে কারও চাকরি যাবে না বলে কর্মকর্তাদের আশ্বাস দিয়েছেন ব্যাংকটির সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরাস্তু খান।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইসলামী ব্যাংকের দুই দিনব্যাপী আয়োজিত শাখা ব্যবস্থাপকদের নিয়ে ব্যবসা উন্নয়ন সম্মেলনের শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন চেয়ারম্যান।

সম্পূর্ণ পেশাদারির ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালনার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখতে শাখা ব্যবস্থাপকদের কাজ করার নির্দেশনা দেন আরাস্তু খান। তিনি বলেন, সবাই তো ভোট দেন। যে কোনো কর্মী যে কোনো দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। কেউ চাইলে বিএনপিকেও ভোট দিতে পারেন। ব্যাংকে সঠিকভাবে কাজ করলে কারও কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু মিছিল করা যাবে না। মিটিং করা যাবে না। গাড়ি ভাঙচুর, বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না। কেউ রাজনীতি করতে পারবেন না। রাজনীতি বলতে শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অনুষ্ঠানে আরাস্তু খান বলেন, ইসলামী ব্যাংকের সব শক্তি ও সামর্থ্যকে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে। দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক হিসেবে দেশের সব মানুষের জন্য এ ব্যাংকের সেবার দরজা উš§ুক্ত থাকবে। ইসলামী ব্যাংকের মৌলিক দর্শন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে কোনো পরিবর্তন হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাংক তার সব কার্যক্রম শরিয়াহ নীতিমালার আলোকে পরিচালনা করবে। এক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করবে।

তিনি বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন করা হবে। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নারী অফিসার নিয়োগ বৃদ্ধি এবং অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনকাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হবে।

সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২০১৬-এর ডিসেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি। একই সময়ে আট হাজার ৮০০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগসহ মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ২০ লাখ। ২০১৬ সালে ইসলামী ব্যাংক আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্স বাণিজ্য করেছে যথাক্রমে ৩৪ হাজার কোটি টাকা, ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং ২৮ হাজার কোটি টাকা।

ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, ইসলামী ব্যাংক দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিচালনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। সরকারের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ ব্যাংক ভবিষ্যতে জিডিপিতে ১ শতাংশ অবদান রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন এসএমই খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যাপক বিনিয়োগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ অর্থনীতি সুদৃঢ়করণসহ প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা রাখবে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকের পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচিকে গরিবি হঠাও আন্দোলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আর পাঁচ লাখ নারী উদ্যোক্তা তৈরি করবে ইসলামী ব্যাংক।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে ইসলামী ব্যাংক। নানামুখী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে সরকারের সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এ ব্যাংক। সম্পূর্ণ পেশাদারির ভিত্তিতে ব্যাংকের মানসম্মত সেবা আরও বেশি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তারা শাখা ব্যবস্থাপকদের প্রতি আহ্বান জানান। ২০১৬ সালের সার্বিক অর্জনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ২০১৭ সালে পরিচালন মুনাফাসহ সব প্যারামিটারে আরও উন্নতি করার পরামর্শ দেন।

অনুষ্ঠানে এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. জিল্লুর রহমান, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল মাবুদ, পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী, সামীম মোহাম্মদ আফজাল, বোরহান উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. কাজী শহিদুল আলম, মো. সাইফুল ইসলাম, এফসিএ, এফসিএমএ, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. মিজানুর রহমান ও অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল করিম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল হামিদ মিঞার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব-উল-আলম। ব্যাংকের অন্যান্য উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী, জোন প্রধান ও শাখা ব্যবস্থাপকরা এ সম্মেলনে অংশ নেন।