আসাদ রাসেল, রাজশাহী: রাজশাহী জুটমিলের শ্রমিকদের প্রায় ৪২ কোটি টাকা চলে গেছে পাটকলের খরচায়। এর মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) ২৭ কোটি এবং গ্রাচুইটির ১৫ কোটি। দীর্ঘদিন ধরেই মিলছে না এ অর্থ। এ নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। সবশেষ তারা আইনি লড়ায়ে নেমেছেন।
জানা যায়, ১৯৮৮ সালে প্রথম পাটকলের হিসেবে চলে যায় শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ফান্ডের অর্থ। সে বছর বন্যাদুর্গতের সহায়তার কথা বলে ৮৮ লাখ টাকা ধার নেয় মিল কর্তৃপক্ষ। সেই টাকা আজও ফেরেনি পিএফ ফান্ডে। বকেয়া পড়েছে সুদও। উল্টো যোগ হয়েছে আরও কোটি কোটি টাকা।
প্রতি সপ্তাহে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা করে এ খাতের টাকা চলে যাচ্ছে পাটকল হিসেবে। সব মিলিয়ে জমা পড়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকা। এ অর্থ পুরোটাই পাটকল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া।
একইভাবে আটকে রয়েছে গ্রাচুইটির ১৫ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন এ অর্থ ফিরে না পাওয়ায় থমকে গেছে শ্রমিকদের অবসরকালীন জীবন। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মরত দুস্থ শ্রমিকরাও।
প্রতি সপ্তাহে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা করে এ খাতের টাকা চলে যাচ্ছে পাটকলের হিসেবে। সব মিলিয়ে জমা পড়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকা। এ অর্থ পুরোটাই পাটকল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া।
একইভাবে আটকে রয়েছে গ্রাচুইটির ১৫ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন এ অর্থ ফিরে না পাওয়ায় থমকে গেছে শ্রমিকদের অবসরকালীন জীবন। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মরত দুস্থ শ্রমিকরাও।
দীর্ঘদিন পাটকলের হিসাব কষেছেন আব্দুল জব্বার। মজুরি শাখার উচ্চমান সহকারী হিসেবে ২০০৬ সালের জুলাইয়ে অবসরে গেছেন তিনি। মিল কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রাচুইটি বাবদ তার পাওনা ১১ লাখ টাকা। বারবার ধর্না দিয়েও পাচ্ছেন না ওই অর্থ। কবে তা পাবেন এ নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারী মিলে প্রায় ৩৫০ জনের মতো অবসরে গেছেন। এর মধ্যে অনেকেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।
কথা হয় পাটকলের সমাপনী বিভাগের সাহায্যকারী মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে এক মাস আগে। পিএফ ফান্ড থেকে সহায়তা চেয়েছিলেন চেহেলাম আয়োজনের জন্য। এখনও তা পাননি। ফলে ওই আয়োজনও তার হয়নি।
অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে মিলের মোটা তাঁত বিভাগের কর্মী শওকত আলীর। এক মাস ধরে তার মেরুদণ্ডে সমস্যা। চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক দেবাশীষ রায়ের কাছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু অর্থাভাবে হচ্ছে না সেই চিকৎসা। পিএফের অর্থ সহায়তা চেয়ে পাননি পাটকল থেকেও।
এমন সমস্যা রাজশাহী পাটকলের শত শত শ্রমিকের। নিজেদের নায্য পাওনা পেতে এরই মধ্যে ৬০ জন শ্রমিক-কর্মচারী উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন। ওই মামলাটি এখনও চলমান। কিন্তু অর্থাভাবে মামলারও তদবির নেই। ফলে মামলা নিষ্পত্তি পর্যন্ত গড়াবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী পাটকলের কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্ট (সিবিএ) সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এ কর্মকাণ্ড। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এ নিয়ে পাটকল কর্তৃপক্ষ উদাসীন।
তিনি অভিযোগ করেন, পিএফ ব্যবস্থাপনায় একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক পদাধিকার বলে পাটকলের প্রকল্প পরিচালক এবং জিএম (হিসাব ও অর্থ)। ওই কমিটিতে তিনজন শ্রমিকও রয়েছেন। কিন্তু কমিটিতে তাদের ভূমিকা নেই। সেই সুযোগও কম।
ওই দুই কর্মকর্তা পাটকলের শীর্ষ কর্মকর্তা হওয়ায় শ্রমিকরা তাদের সামনে কোনো কথা বলতে পারেন না। এ সুযোগেই পিএফ থেকে টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাটকল খাতে। টাকা পেতে এরই মধ্যে ৫০০ জনের মতো শ্রমিক আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু অর্থ না থাকায় কাউকে টাকা দেওয়া যায়নি।
গ্রাচুইটিতেও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে ২০১০-১১ অর্থবছরে এ খাতের এক কোটি ৯৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের। এর পর থেকে কেউ টাকা পাননি। তার ভাষায়, বিষয়টি নিয়ে তারা পাটকল কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানিয়েছেন। জবাবে তাদের জানানো হয়েছে, ফান্ডে টাকা না থাকায় দেওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয়ভাবে দেনদরবার হয়েছে, মন্ত্রণালয়েও জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাটকলের প্রকল্প প্রধান প্রকৌশলী জিয়াউল হক জানান, দীর্ঘদিন পিএফের ওই অর্থ সুদসহ পুঞ্জীভূত হয়েছে। ফান্ড না থাকায় তা ফিরিয়ে দেওয়া যায়নি। একই ঘটনা ঘটেছে গ্রাচুইটির ক্ষেত্রেও।
সবশেষ ২০১০-১১ অর্থবছরে এ ফান্ডের অর্থ পেয়েছেন শ্রমিকরা। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে শ্রমিকরা অর্থ পেয়ে যাবেন। তবে কবে নাগাদ তা পাবেন, এটি নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি প্রকল্প প্রধান।
