বর্তমান বিশ্বে যেসব দেশে কর-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ অনুপাত ১০ শতাংশেরও কম। দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশে এত কম কর-জিডিপি অনুপাত নেই। আর কর-জিডিপি অনুপাত কম থাকার কারণে সরকার নাগরিকদের পেছনে বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারে না। ফলে বিভিন্ন উৎস থেকে সরকারকে ধার করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) রাজস্ব বাড়ানোর জন্য বেশকিছু শর্ত দিয়েছে। এ শর্ত পরিপালন করতে হলে আগামী বছরই বর্তমান ধারার চেয়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আহরণ করতে হবে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু এই বাড়তি রাজস্ব আহরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কতটা প্রস্তুত, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কাজেই এনবিআর যাতে রাজস্ব আহরণ সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নেই সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘আইএমএফের শর্ত: আগামী বছরই অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে হবে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, রাজস্ব খাতে আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে হবে। এর পরের বছরগুলোয় এ আয় আরও বাড়াতে হবে। কিন্তু এনবিআরের এ ধরনের সক্ষমতা নেই বলেই বিভিন্ন সময়ে প্রতীয়মান হয়। এক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা আবশ্যক বলে মনে করি।
ব্যবসায়ী শ্রেণিসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাংলাদেশের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো স্বয়ংক্রিয় কর আহরণ ব্যবস্থা চালু না করা। একই সঙ্গে কর আহরণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের হাতে অধিক হারে ক্ষমতা দেয়া। কর কর্মকর্তাদের অতি বাড়াবাড়ি ও হয়রানিমূলক আচরণের কারণে সাধারণ করদাতারা কর কার্যালয়ে যেতে চান না। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রয়োজন কর আহরণ কার্যক্রমে অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করা। এই অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করার জন্য প্রয়োজন আইনি সংস্কার করা। আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে আইন সংস্কারের প্রস্তাবও রয়েছে। কাজেই আইনি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া অত্যাবশ্যক বলে মনে করি। পাশাপাশি কর কার্যালয়ে করদাতারা যেসব হয়রানির শিকার হন, তা দূর করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে করসেবার অটোমেশন নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করি। কেননা করদাতারা কর অফিসের কর্মচারীদের কাছে সেবা নিতে গেলে তাদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। এই বাস্তবতায় কর প্রশাসনে দক্ষতা আনয়নের জন্য কর আহরণ ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা আবশ্যক বলে মনে করি।