প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

রাবারকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণাসহ ১১ দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাবার বাংলাদেশের সাদা সোনা নামে পরিচিত। দেশের বাজারে রাবারের দ্রব্য যানবাহনের টায়ার, টিউব, জুতা, স্যান্ডেল, হোসপাইপ, ফোম, খেলার সামগ্রী প্রভৃতির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য রাবার উৎপাদনকারী দেশ একে কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও আমাদের দেশে এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ রাবার গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে এসব দাবি তুলে ধরেন অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন। সম্মেলনটি সঞ্চলনা করেন রাবার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহাম্মদ হারুন।

এ খাতের উদ্যোক্তারা সরকার প্রদত্ত কৃষি-বিষয়ক সব প্রণোদনা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এ খাতের বিকাশে রাবারকে কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি করে সংগঠনটি, সেইসঙ্গে খাতটির বিকাশে প্রযুক্তিগত সহয়তা ও আর্থিক প্রণোদনার আহ্বান জানানো হয়।

দেশের রাবার শিল্পের সম্প্রসারণ ও গুণগত মানসম্পন্ন রাবার উৎপাদনের লক্ষ্যে বিদ্যমান সমস্যা নিরসনসহ সরকারের কাছে ১১ দফা বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলোÑগত শতাব্দীর আশির দশকে বরাদ্দকৃত প্লটগুলোর চুক্তির নবায়ন, রাবার চাষিদের স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা দেয়া, বিদেশ থেকে উচ্চ ফলনশীল বীজ আমদানি, রাবারকে কৃষিপণ্য ঘোষণা, দেশে উৎপাদিত রাবার পণ্যের ওপর ভ্যাট/ট্যাক্স প্রত্যাহার, স্থানীয় রাবার শিল্পের সুরক্ষায় আমদানি পর্যায়ের রাবারের শুল্ক/কর বৃদ্ধি, হেডম্যান রিপোর্টের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করা, অবৈধ দখল বন্ধ করা, জমি হস্তান্তর ও নামজারির ব্যবস্থা করা এবং রাবার রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি বাগানের ওপর ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডবের কারণে রাবারশিল্প ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছে। এ বিষয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও সার্বিক সহায়তার আহ্বান জানান তিনি। বিশেষ করে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে কয়েক মাস ধরে উপর্যুপরি সন্ত্রাসী হামলায় হাজার হাজার রাবার গাছ কেটে ফেলা হয় এবং কর্মচারীদের মারধর

করা হয়। এজন্য ভয়ে কর্মচারী-কর্মকর্তারা বাগানে যেতে পারেন না। এতে স্থানীয় এক প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসীদের অর্থ জোগান দেয় বলে অভিযোগ দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, ষাটের দশকে আমদানি করা বীজের চারা থেকে বর্তমানে আমাদের উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালতি হচ্ছে, তবে এ ধরনের বীজ ফলন ক্ষমতা কম থাকায় আমাদের উদ্যোক্তারা আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে। এ অবস্থায় অন্যান্য দেশ থেকে উচ্চ ফলনশীল বীজ আমদানিতে বিশেষ করে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেন।

এ খাতের উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণ দানের নিশ্চয়তার পাশাপাশি বর্তমানে আরোপিত শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে হ্রাসকরণ এবং একই সঙ্গে স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় আমদানিকৃত রাবারের ওপর শুল্কহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন সংগঠনের এ নেতা। একই সঙ্গে খাতটির বিকাশে গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক সুবিধা-সংবলিত একটি ‘রাবার রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব করা হয়।

বিশেষ করে সমিতির সর্ববৃহৎ সদস্য প্রতিষ্ঠান লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে সাম্প্রতিককালে যে সমস্যাগুলো ঘটেছে, আদিবাসীদের যে একটি মহল সেখানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে, ভূমি দখলের জন্য চেষ্টা করছে তা অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় রাবার ইন্ডাস্ট্রিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য হুমকির আশঙ্কা দেখা দেবে বলেও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলা হয়।

সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন বলেন, প্রশাসনের কাছে রাবার বাগানের মালিক সমিতি লিজপ্রাপ্ত জমিগুলোকে সীমানা নির্ধারণ করার জন্য সরকারের প্রতি জরুরি ভিত্তিতে আহ্বান জানাচ্ছি এবং এটি নিষ্পত্তি করা হলে ভূমি-সংক্রান্ত বিরোধ অনেক কমে যাবে। লামা রাবারের মতো বৃহত্তর প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানানো হচ্ছে। যতটুকু জানা যায়, সেখানে একটি তৃতীয় পক্ষ থেকে ইন্ধন জোগানো হচ্ছে। এ বিষয়গুলো তদন্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রাবার গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মনসুর আলম, সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন, সাবেক সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের সদস্য মো. সলিমুল হক চৌধুরী প্রমুখ।