শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ছেড়ে গেছে, কিংবা বাজার সংকুচিত করেছে পশ্চিমা গাড়ি প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ডগুলো। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে চীনা গাড়ি নির্মাতারা। সেই শূন্যতা পূরণ করছে তারা। বিকল্প উপায় তেমন না থাকায় রাশিয়ার গ্রাহকদের চীনা গাড়ির ব্র্যান্ডগুলোকেই বেছে নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে এবং তা অপেক্ষাকৃত বেশি দামে। খবর: রয়টার্স।
চীনের গাড়ির ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি অতীতে রাশিয়ার নাগরিকদের অতটা আগ্রহ ছিল না। মান ও বেশি দামের কারণে চীনা গাড়ি পছন্দ ছিল না। বরং পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোয় প্রায় সবার আস্থা ছিল। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন বদলেছে।
গাড়ির বাজার বিশ্লেষণকারী সংস্থা অটোস্ট্যাট ও পরামর্শক সংস্থা পিপিকের তথ্য অনুসারে, গত এক বছরে ফ্রান্সের রেনল্ট, জাপানি নিশান ও জার্মানির গাড়ি কোম্পানি মার্সিডিজ বেঞ্জের মতো বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড রাশিয়া ছেড়ে গেছে। সেই সুযোগ নিয়েছে চীনের নির্মাতারা। বর্তমানে রাশিয়ায় নতুন গাড়ির প্রায় ৪০ শতাংশ আসছে চীনের হাভাল, চেরি ও গিলির মতো ব্র্যান্ডগুলো থেকে, ২০২২ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেও যা ১০ শতাংশেরও কম ছিল।
অটোস্ট্যাট ও পিপিকের তথ্য অনুসারে, চলতি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে চীনা ব্র্যান্ডের বাজারের শেয়ার ৩৭ দশমিক ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে, এক বছর আগের থেকে যা ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়া ত্যাগ করা ইউরোপীয়, জাপানি ও কোরিয়ার ব্র্যান্ডের বিক্রি ৭০ শতাংশ থেকে কমে ২২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমেছে।
তবে রাশিয়ার বাজারে চীনা গাড়ির হিস্যা বাড়লেও আস্থার সংকট রয়েই গেছে। ব্যক্তি ও সরবরাহকারী (ডিলারশিপ) পর্যায়ে বেশ কয়েকজন রাশিয়ান গাড়ির ক্রেতা জানিয়েছেন, তারা কিছু চীনা গাড়ির গুণমান পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় কম বলে মনে করেছেন। অন্যদিকে শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাশিয়ার বাজারে চীনের গাড়ির বিক্রি বেড়েছে। তবে একই সঙ্গে তাদের খ্যাতিও বাড়ানো প্রয়োজন।
অটো শিল্পবিশেষজ্ঞ সের্গেই আসলানিয়ান বলেন, হ্যাঁ, এখানে তাদের (চীন) প্রায় কোনো প্রতিযোগী নেই। তবে এর অর্থ এই নয় যে, লোকেরা তাদের মতামত দ্রুত পরিবর্তন করবে।
চীনের গাড়ির মান নিয়ে অনেক ব্যবহারকারীর অসন্তোষ রয়েছে। তাদেরই একজন ২৮ বছর বয়সী স্টেপান। এই তরুণ চীনের নির্মিত গাড়ি দিয়ে রাশিয়ায় কার শেয়ারিং পরিষেবা ব্যবহার করেন। তার অভিযোগ, চীনের গাড়ি আরামদায়কভাবে চালানো যায় না।
ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর রাশিয়া ছাড়ার পরিকল্পনা করে স্কোডা। বর্তমানে কোম্পানিটি রাশিয়ায় তাদের সম্পদ বিক্রি করার চুক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ গত ডিসেম্বরে চীন সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি চীনের নির্মিত গাড়িতে করে ঘোরেন। এ নিয়ে সম্প্রতি অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি। মেদভেদেভ বলেন, চীনা নির্মাতাদের কাজ ভালো। আমরা অতীতে তাদের কিছু নকশা দেখে হাসতাম। কিন্তু আমি চীনে যে গাড়িটি চালিয়েছিলাম, তা অবশ্যই মার্সিডিজের চেয়ে খারাপ ছিল না।
২০০০ সালের পর থেকে রাশিয়ায় পশ্চিমা গাড়ি নির্মাতারা কারখানা তৈরি করতে শুরু করে। তখন থেকে দেশটির স্থানীয় গাড়ি নির্মাতারা ইউরোপের গাড়ি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা করে আসছে। কিন্তু গত কয়েক মাসে তাদের প্রতিযোগী পাল্টে গেছে।
রাশিয়ার স্থানীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আলটেয়ার-অটোর এক পরিচালক ভøাদিমির শেস্তাক বলেন, আমরা আমাদের পুরো জীবন ইউরোপ, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কাটিয়েছি। বিশেষ করে চীনা বাজারকে বিবেচনায় নিইনি। কিন্তু বর্তমানে সেই চীনা গাড়ির বাজার এখানে অবিশ্বাস্য হারে বিকশিত হয়েছে।
রাশিয়ার গ্রাহকদের জন্য আরেকটি সমস্যা হলো দাম। বিহাইন্ড দ্য হুইল ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ম্যাক্সিম কাদাকভ বলেন, চীনারা প্রচুর গাড়ি নিয়ে আসছে। কিন্তু আমরা যদি গুণগত মানের কথা নাও বলি, তাহলেও বলতে হবে, কোনো সস্তা গাড়ি নেই।