প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহী কলেজের প্রশাসন ও গেটে প্রহরীর দায়িত্ব পালন করছেন মো: শাহিন আলম। দীর্ঘ ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে। চাকুরী রাজস্বখাতভূক্ত হয়নি। শুধু শাহীন আলম নয় কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের মো: কিবরিয়া, রসায়ন বিভাগের এহসানুল কবির, মো: বদিউজ্জামান নয়ন সহ রাজশাহী বিভাগের সহস্রাধিক সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারীরা রাস্তায় নেমেছেন।
আজ শনিবার চাকুরী রাজস্বখাতভূক্ত করার দাবিতে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে ৮ জেলার ৪ শতাধিক কর্মচারিরা মানববন্ধন করেছেন। সেইসাথে রোববার জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারক প্রদান করবেন তারা।
জানা যায়, সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারীবৃন্দ দীর্ঘসময় ‘ক্ষেত্রভেদে ২০ বছর থেকে অদ্যাবদি বিভিন্ন পদে কাজ করে আসছেন। বেসরকারিভাবে এসব নিয়োগ দিয়েছেন নিজ নিজ কলেজ অধ্যক্ষ। ১৯৯১ এর নিয়োগ বিধিতে স্ব-স্ব কলেজের শুন্য পদের একশত ভাগের ভিতর ৬০ ভাগ নিয়োগ কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রদান করে। এরপর সিনিয়র হিসেবে কর্মরত কর্মচারীদের চাকুরী রাজস্বখাতভূক্ত করা হতো মহাপরিচালক বরাবর আবেদনের প্রেক্ষিতে। কিন্তু ২০১৩ সালে অধিদপ্তর থেকে শতভাগ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় বঞ্চিত হয় সকল বেসরকারী কর্মচারীরা।
তথ্য অনুযায়ী, সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৪ এর পরিপত্র অনুযায়ী নিরাপত্তাপ্রহরী/নৈশপ্রহরী/অত্যাবশকীয় কর্মচারী খাত হতে দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে নিযুক্ত কর্মচারীদের মজুরী, কম্পিউটার ও পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি ব্যয়বহন করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৯৯১ সালের নিয়োগ বিধি ৬(৩) (ক) ধারা মোতাবেক অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের আচরণ ও কর্ম সন্তোষজনক হওয়ায় চাকুরী স্থায়ীকরণ করা হয়। এরপর সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রীট পিটিশন নং-৩২৭৫/২০১৭ ও ১১৭/২০১৭ বিচারাধীন থাকায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদ সংরক্ষণ করা হয়।
এছাড়া শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে নিয়োজিত ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর ৩৩ (তেত্রিশ) জন কর্মচারীর চাকুরী আত্মীকরণের সুপারিশ অনুযায়ী ৯৩০০-২২৪৯০, ৮২৫০-২২৪৯০ বেতন স্কেলে বিভিন্ন কর্মস্থলে নিয়মিতকরণ করে পদায়ন করা হয়। অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংকের ৭০০ অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারীদের চাকুরী স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়াধীন ও বিমান বাংলাদেশের দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারীদের চাকুরী নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারীরা কোন আশার বানি শুনতে পাননি। শূন্য পদের বিপরীতে অথবা যে কলেজে কর্মরত তার চাকুরী সে স্থানে রাজস্বখাতভূক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগীয় সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এহসানুল কবির বলেন, আমাদের অনেকের চাকরির বয়স ৩০ বছররের অধিক হয়ে গেছে। আমরা সামান্য মজুরিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা করাতে পারছি না। ৫ থেকে ১১হাজার টাকা বেতনে বর্তমান সময়ে সংসার চালানো যায়না। রাজশাহী বিভাগে ৩৩ টি কলেজের প্রায় সাড়ে ৯’শ কর্মচারী এভাবে ধুকছি। সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ভুক্তভোগী। বিভিন্ন কলেজ সরকারি করা হলেও আমাদের বিষয়টি মানবিক বিবেচনা করা হচ্ছে না।
তিনি আরোও বলেন, ২০১৩ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল ও আমাদের জাতীয়করণের জন্য মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট পিটিশন করা হয়। কিছু কিছু মামলা ইতোমধ্যে আমাদের পক্ষে রায় ঘোষণা দিয়েছে। ২০১৭ সালে মামলার প্রেক্ষিতে কিছু পদ শূন্য রেখে ৩য় শ্রেণীর নিয়োগ সম্পূর্ণ করে। সমগ্র বাংলাদেশের কলেজ সমূহের সূচনালগ্নে যে পদ সৃষ্টি হয়েছিল তা দিয়ে বর্তমান কলেজের অনার্স মাস্টার্স বিভাগ ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে না পেরে আমাদের মাউশির পরিপত্র মোতাবেক কলেজ অধ্যক্ষগণ নিয়োগ প্রদান করেন। অনেক জায়গায় রাজস্ব খাতভূক্ত হলেও আমরা অবহেলিত। আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।