প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

রিটার্নিং অফিসারসহ ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িত রিটার্নিং অফিসারসহ ১৩৩ নির্বাচনী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জড়িত অন্যরা হলেনÑ১২৫ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহা, একজন নির্বাহী অফিসার এবং ৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা। এ ছাড়া অনিয়ম সংঘটিত ১৪৫ নির্বাচনী কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টরা ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এই সুপারিশের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি এই সুপারিশের কথা উল্লেখ করেন। তবে কোনো ধরনের অনিয়মে সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়নি। এছাড়া কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধেও সরাসরি অনিয়মে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থার সুপারিশ আসেনি।

ইসি তার সুপারিশে ‘নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১’-এর বিধান মতে, এ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। সিইসি জানান, দায়িত্বে অবহেলার জন্য রিটার্নিং অফিসার ইসির আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একজন প্রিসাইডিং অফিসারকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত, ৫ এসআইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, ১২৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে, এডিসি ও একজন নির্বাহী হাকিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ১৪৫ কেন্দ্রের নির্বাচনী এজেন্টদের ভোটে আর দায়িত্ব না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১-এর ধারা ৫ অনুসারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অসদাচরণের জন্য ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করার জন্য সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে চিঠি দিতে হবে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সহকারী কমিশনারের নাম জেনে (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, তদন্ত প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ করা হয়নি) তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ পালনের কারণে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে চিঠি প্রদান করবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজশাহী) বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১-এর ধারা ৫ অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য তার বিরুদ্ধে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এক মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত না করলে কমিশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১-এর ধারা ৬ (২) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সব কেন্দ্রের দায়িত্ব পালনকারী নির্বাচনী এজেন্টদের তালিকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কর্তৃক সিলকৃত ব্যাগে রয়েছে, যেহেতু নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ের ওপর আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই যেসব কেন্দ্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, সেসব কেন্দ্রের ব্যাগ খুলে দায়ী এজেন্টদের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, গাইবান্ধা এই তালিকা করবেন। দোষী নির্বাচনী এজেন্টদের পরবর্তী নির্বাচনে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না।

ভবিষ্যতে নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম করা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গাইবান্ধা-৫ আসনের পুনর্নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল অনিয়মে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।