মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বর্তমান সরকারের কৌশলগত লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং চলমান আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের আওতায় ব্যাংকিং সেবাকে ব্যয় সাশ্রয়ীভাবে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। দেশে ২০১৪ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও ইসলামী ব্যাংক বাণিজ্যিকভাবে এ কার্যক্রম শুরু করেছে ২০১৭ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং দুই হাজার ৬৯১টি এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে দেশব্যাপী ৪৯২টি উপজেলায় আধুনিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। রেমিট্যান্স আহরণ ও আমানতের পরিমাণ বিবেচনায় ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং দেশের শীর্ষ অবস্থানে।
ব্যাংকের ৩৮৪টি শাখা ও ২২৮টি উপশাখার মতো দুই হাজার ৬৯১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটও ইসলামী ব্যাংকেরই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। ব্যাংকের এ ইউনিটগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রযুক্তিসমৃদ্ধ আর্থিক সেবার দ্বার উম্মুক্ত করেছে। পরিপূর্ণ প্রয়োগ ঘটেছে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে লেনদেন সুবিধা প্রদান করছে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং, যা গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা দিচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
২০২১ সালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রতি মাসে গ্রাহকদের মধ্যে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ বিতরণ করা হয়ে থাকে। সমতল-পাহাড়, হাওর, চরাঞ্চল ও দ্বীপ এলাকাসহ নিবিড় পল্লির প্রান্তিক মানুষের হাতের নাগালে ব্যাংকিং সেবা নিয়ে হাজির হয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এই কার্যক্রমের আওতায় ব্যবসার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে প্রায় ১৪ হাজার যুবকের সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট গ্রাহক এক কোটি ৬০ লাখ, যার মধ্যে ৩১ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের। এসব গ্রাহকের মাধ্যমে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত সংগৃহীত হয়েছে। দেশের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানতের (ডিপোজিট) মার্কেট শেয়ার ৩৫ শতাংশ।
বিশ্বব্যাপী চলমান কোভিড মহামারির মধ্যেও ইসলামী ব্যাংক সফলভাবে এজেন্ট ব্যাংকিংসহ শাখাগুলোর মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ২০২১ সালে ৪০৩টি নতুন এজেন্ট আউটলেট চালু করা হয়েছে। এ সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ২৩ লাখ ৪৮ হাজার এবং আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আহরিত ২৮ লাখ কোটি টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্সের মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলে বিতরণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এটা দেশের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণের ৬৫ শতাংশ।
এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়েছে। ব্যাংকের এজেন্ট, তাদের নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বছরব্যাপী নানা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ২০২১ সালে প্রায় আড়াই হাজার প্রোগ্রাম ও প্রশিক্ষণ আয়োজন হয়। এর মধ্যে জোনভিত্তিক ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলন, এজেন্ট ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, পরিপালন কর্মসূচি এবং আইটি-বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার জনকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রতিটি এজেন্ট কেন্দ্রই ব্যাংকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। এজেন্ট কেন্দ্রে সন্তোষজনক ও ঝুঁকিমুক্ত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে ব্যাংকের নিকটস্থ শাখা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং সফটওয়ার ব্যাংকের নিজস্ব হওয়ায় এর প্রযুক্তিগত ঝুঁকিও অনেক কম। গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল করতে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ও কার্যকর মাধ্যম হিসেবে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ব্যাংকিং সেবা বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সঞ্চয়ের অভ্যাস বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তা তৈরি এবং নগদ অর্থের সহজ প্রবাহ সৃষ্টির কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম দেশের ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পূরণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ বিতরণের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে এরই মধ্যে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং বিনিয়োগ কার্যক্রম চালু করেছে।
এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণমুখী সেবা অতি স্বল্প ব্যয়ে প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর যে অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখবে। বিকল্প ব্যাংকিং সেবা ও কার্ডভিত্তিক লেনদেনের প্রসার ঘটছে গ্রাম থেকে গ্রামে। অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে সহজ পদ্ধতিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক ছড়িয়ে দিচ্ছে আর্থিক সেবা। লেনদেন হচ্ছে ব্যাংকের মতোই। শাখার মতোই বিভিন্ন ধরনের সেবা নিচ্ছেন গ্রাহকেরা। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্টগুলোর দৈনিক লেনদেন ৭৫০ কোটি টাকা এবং দৈনিক রেমিট্যান্স সরবরাহ ১৫০ কোটি টাকা।
ইসলামী ব্যাংকের আমানতের মাইলফলক অর্জনে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা আর্থিক খাতে লেনদেনে উৎকর্ষ সাধনে সাড়া ফেলেছে। সব ধরনের ব্যাংক হিসাব খোলা, নগদ জমা উত্তোলন ও ফান্ড ট্রান্সফার, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের অর্থপ্রদান, হিসাবের ব্যালেন্স অনুসন্ধান ও হিসাব বিবরণী প্রদান, অ্যাকাউন্টের বিপরীতে চেকবই ও ডেবিট কার্ড প্রদান, ক্লিয়ারিং চেক গ্রহণ, পিওএস মেশিনের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন, ইউটিলিটি বিল গ্রহণ, ডেসকো, ডিপিডিসি, ঢাকা ওয়াসা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার বিলগ্রহণসহ বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত যেকোনো সেবা প্রদান করছে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং।
বর্তমানে আমরা গ্রাহকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছি। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার দ্বার গ্রাহকদের জন্য উš§ুক্ত করা হবে।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানতের পাশাপাশি বিনিয়োগের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল করতে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ও কার্যকর মাধ্যম হিসেবে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সঞ্চয়ের অভ্যাস বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তা তৈরি এবং নগদ অর্থের সহজ প্রবাহ সৃষ্টির কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম দেশের ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। তাই প্রতিযোগিতামুলক ব্যাংকিং সেক্টরে এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে লাভ করা যায় বেশি।
ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড