মানবদেহ অতি উন্নত ও স্পর্শকাতর একটি যন্ত্র। এই যন্ত্রকে বিশ্রাম ও সতেজ রাখার জন্য উপবাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রমজান মাসে সারাদিনের উপবাসের পর মানুষ যেমন ক্ষুধার্ত থাকে, তেমনি থাকে পিপাসার্ত। এর পরও চাহিদামতো খাবার গ্রহণ করতে হবে। অনেকের ধারণা, এ সময় বেশি বেশি ক্যালরিবহুল খাবার খেলে দেহ-মন সুন্দর ও সতেজ থাকে। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। দেখা যায়, পরিমাণের অতিরিক্ত খাবার দেহের রাসায়নিক উপাদানের সূক্ষ্ম তারতম্য ঘটায় এবং রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। এদিকে পাকস্থলীতে চর্বি ভাসতে থাকে বলে যকৃৎ ও গ্রন্থির কোষসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। ফলে বিপাক ক্রিয়া সঠিকভাবে হয় না। এ কারণে অন্যান্য দিন যার যতটুকু খাওয়া প্রয়োজন, রোজা পালন করেও ততটুকু খাওয়া উচিত। যেহেতু পুরো ৩০ দিন রোজা রাখতে হবে, এ কারণে সুস্থ থাকাটা খুবই জরুরি। এ সময় তিনটি খাবার, যেমন ইফতার, সন্ধ্যারাত ও সাহরিতে খাবার খাওয়া হয়। ইফতার হতে হবে পুষ্টিকর, সহজপাচ্য, রুচিসম্মত ও সহজলভ্য। ইফতারে কখনও বাসি খাবার রাখা ঠিক নয়। এতে পেটের অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ইফতারে শরবত একটি প্রধান পানীয়। এটা যেমন শরীরে পানিস্বল্পতা রোধ করে, তেমনি ক্লান্তি দূর করে। তবে বৈচিত্র্য আনার জন্য একেক দিন একেক উপাদান দিয়ে শরবত বানানো যেতে পারে। যেমন ইসপগুলের ভুসি, কাগজিলেবু, তোকমা, তেঁতুল, পাকা আম, দুধ, বেল, দই, স্কোয়াশ, জুস, ট্যাং ইত্যাদি। তবে ডায়াবেটিস থাকলে চিনি বা গুড়ের পরিবর্তে বিকল্প চিনি ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া ডাবের পানি ও ফলের রস উত্তম পানীয়। এতে খনিজ লবণ ও ভিটামিন রয়েছে। ইফতারের অন্যতম উপাদন হলো ছোলা বা বুট ভাজা। এটি যেমন শক্তিবর্ধক, তেমনি এতে আছে খনিজ লবণ। প্রোটিন ও শর্করার চাহিদা ভালোভাবে মেটানো যায়। ছোলা ছাড়াও খাওয়া যায় চটপটি, ঘুগনি ইত্যাদি। এগুলোয় তেলের ব্যবহার তেমন হয় না বলে স্বাস্থ্যের দিক থেকে ভালো।
এদিকে অন্যান্য উপাদানে তেলের ব্যবহার বেশি হয় বলে খাবারে ক্যালরির মাত্রা বেড়ে যায়। এজন্য যতটা সম্ভব তেল কমাতে পারলে ভালো হয়। রুচি বদলানোর জন্য একেক দিন একেক ধরনের ডাল দিয়ে পেঁয়াজু করে খাওয়া যায়। আবার ডালের সঙ্গে আলু কুচি, বেগুন কুচি, লাউ বা পেঁপে কুচি, অথবা ময়দার সঙ্গে যে কোনো শাকের বড়া তৈরি করে খাওয়া যায়। ময়দার পরিবর্তে বেসনও ব্যবহার করা যায়। যদি ইফতারের প্লেটে সবজির তৈরি খাবার রাখা যায়, তাতে যেমন স্বাদ বদলানো যায়, তেমনি সবজি খাওয়ারও একটা সুযোগ তৈরি হয়। ইফতারে কাঁচা ছোলা খাওয়াও স্বাস্থ্যসম্মত। (বাকি অংশ আগামীকাল)
আখতারুন নাহার আলো
নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট