১৯৯৩ সালে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ জুট করপোরেশন (বিজেসি)। ওই সময় করপোরেশনের সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। ক্রমান্বয়ে সংস্থাটির সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজে জটিলতা বেড়েছে। বিলুপ্ত প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে ধারাবাহিক
প্রতিবেদনের আজ দ্বিতীয় পর্ব……….
জাকারিয়া পলাশ: বিলুপ্ত বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের (বিজেসি) মালিকানাধীন সম্পদ ‘সরকারি প্রয়োজনে’ কাজে লাগানোর লক্ষ্যে আগ্রহ প্রস্তাব আহ্বান করেছিল বিজেসি। দেশের ৩৫টি জেলার ১৬১টি অঙ্গন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময়ে মাত্র একটি অঙ্গন বস্ত্র অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে সংস্থাটির মালিকানাধীন বিপুল সম্পত্তি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া বা লিজ দেওয়া থাকলেও টাকা আদায় করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। কোটি কোটি টাকার ভাড়া বকেয়া রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে। এ নিয়ে রয়েছে মামলাও।
তথ্যমতে, ২০১৫ সালে বিজেসির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিগুলো বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অন্য প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে বিজেসি সরকারি প্রয়োজনে কাজে লাগানোর জন্য ৩৫টি জেলায় অবস্থিত বিক্রি না হওয়া ১৬১টি অঙ্গন হস্তান্তরের ঘোষণা দেয়। সে হিসেবে বিজেসির প্রায় ২৮৩ একর সম্পত্তি কাজে লাগানোর কথা। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি রয়েছে।
সূত্রমতে, এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও এ সংক্রান্ত প্রস্তাব জমা হয় মাত্র তিনটি, যার মধ্যে রংপুরের আলমনগরে অবস্থিত একটি অঙ্গনকে বস্ত্র অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উল্লিখিত নথিতে ওইসব জমির অধিকাংশই বেদখল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জমির দাগ ও খতিয়ান নম্বরসহ বর্তমান দখলকারীর নামও অধিকাংশ ক্ষেত্রে উল্লেখ রয়েছে। সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলার ছয়টি স্থাপনায় মোট ১১ একর সম্পত্তি রয়েছে বিজেসির। এর মধ্যে দখলে আছে সাড়ে চার একর। জামালপুর জেলার প্রায় ১৭ একর সম্পত্তির মধ্যে বিজেসির দখলে আছে সাড়ে সাত একর। সম্পত্তি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের কাছে ৮৭টি আবেদন করা হয়েছে। ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ৭০টি, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ১৪টি, খুলনায় তিনটি ও নারায়ণগঞ্জে চারটি আবেদন করা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বিচারাধীন মামলার কারণে অনেক জমি বেদখল থাকলেও তাতে উচ্ছেদ অভিযানের আবেদন করতে পারেনি বিজেসি।
এ প্রসঙ্গে বিজেসির সহ-সচিব মো. রেজাউল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘জমিগুলো বেদখল হয়েছে এমন নয়। ২০০০ সালের দিকে বিজেসি তার অধিকাংশ সম্পত্তি বাৎসরিক ভিত্তিতে ভাড়া বা লিজ দেয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। পরে অনেকে লিজের মেয়াদ বৃদ্ধি না করে কোনো উসিলায় মামলা করে দেয়। এখন বিচারাধীন বিষয় বলে দাবি করে তারা আর ভাড়া দিচ্ছে না। অথচ সেখানে তারা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সম্পত্তি বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। পরে ভাড়াটিয়ারা সম্পত্তি কিনে নেওয়ার জন্য দরপত্র জমা দেন। এভাবে বিক্রির চুক্তি হয়। পরে তারা এক কিস্তিতে কিছু টাকা দিয়ে আর দেননি। আবার ভাড়াও দেননি। সেগুলো নিয়েও মামলা হয়েছে। এভাবে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় জমিগুলো বিক্রি করা যাচ্ছে না।’
সূত্রমতে, ওইসব মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনায় বিজেসিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০ জন আইনজীবী রাখতে হচ্ছে। সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া ভাড়ার পরিমাণ প্রায় ১৮ কোটি টাকা। তবে বেশ কিছু অঙ্গন, গুদাম, প্রেস হাউজ থেকে নিয়মিত ভাড়া পাচ্ছে বিজেসি। ওই ভাড়া দিয়েই এখন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে। বিলুপ্তির সময় ২৪৪ জনবল থাকলেও ক্রমান্বয়ে অবসর ও মৃত্যুবরণের কারণে এখন সংস্থাটির ৩৩ পদে স্থায়ী লোকবল রয়েছে মাত্র ২১ জন। এছাড়া দেশব্যাপী বিভিন্ন সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য দৈনিকভিত্তিক ৮৭ জন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। কর্মকর্তারা জানান, লোকবলের অভাবে সম্পত্তি দেখাশোনা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু নতুন লোকবল নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছে না। সবশেষে ২০১০ সালে দৈনিক ভিত্তিতে ২০ জন লোক নিয়োগের অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল। এখন নতুন করে ৩০ জন নিয়োগের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। বিলুপ্ত হওয়ায় সংস্থাটির ব্যয় বহনের জন্য সরকারি তরফে কোনো অর্থ দেওয়া হয় না। বিভিন্ন সম্পত্তির প্রাপ্ত ভাড়া থেকেই বেতন ও অন্যান্য খরচ চালানো হয়। কর্মরত কারও অবসর ভাতাও দেওয়া হয় ওই অর্থ থেকে। তবে কোনো সম্পত্তি বিক্রি হলে সে টাকা সরকারি খাতে জমা হয়।