নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিডের সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় দেশের সব স্কুল, কলেজ ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও একই ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ে গতকাল শুক্রবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সেখানে বলা হয়েছে, কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগ দেবেন, তাদের অবশ্যই টিকা সনদ অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করা পিসিআরে কভিড টেস্টের রিপোর্ট দেখাতে হবে।
সরকারি, বেসরকারি অফিস এবং শিল্প-কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা সনদ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
বাজার, শপিংমল, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সাধারণ লোকসমাগমের স্থানে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কভিডের সংক্রমণ কমানোর জন্য সরকার নতুন করে এসব পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দেশে কভিড সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক দিনে প্রায় ১১ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ শতাংশ করে রোগী বাড়ছে। এরই মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোয় প্রায় ৩৩ শতাংশ শয্যা রোগীতে ভর্তি হয়ে গেছে।’
দেশে সার্স ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করে, যা ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দেয়া হয়।
অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস ও ট্রেন চালানোর পাশাপাশি উš§ুক্ত স্থানে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় সে সময়।
পাশাপাশি রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার ক্ষেত্রে কভিড টিকার সনদ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয় এবং টিকা সনদ ছাড়া ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে নিষেধ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার বিধিনিষেধ দিলেও মানুষ সেভাবে মানছে না। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বলেই সংক্রমণ বাড়ছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণেই ফের স্কুল বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্কুল খুলেছিলাম। কিন্তু ইদানীং লক্ষ করলাম স্কুল-কলেজের সংক্রমণ বেড়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে আসছে চিকিৎসার জন্য। এটা আশঙ্কাজনক। সংক্রমণ এভাবে বাড়লে ঢাকার শহরের সব হাসপাতালে দেখা যাবে বেড খালি নাই।
‘এ কারণে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তার সম্মতি সাপেক্ষে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উদ্দেশ্য সংক্রমণ যেন কমে, শিশুরা যেন আক্রান্ত না হয়। দুই সপ্তাহ পর পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
দেশে কভিড মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি হলে ২০২০ সালের মার্চে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ধাপে ধাপে ছুটি বাড়ানো হয়।
অবশেষে সংক্রমণ কমে এলে ৫৪৩ দিন পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয় সরকার। তাতে দীর্ঘদিন পর শ্রেণিকক্ষে ফেরার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও নেয়া সম্ভব হয়।
এরইমধ্যে গত নভেম্বরে সার্স ভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশেও ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ৯ জানুয়ারি বলেছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে টিকাদান কার্যক্রমে জোর দিচ্ছে সরকার। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখতে ‘সর্বাত্মক’ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তারা।
এর পর দুই সপ্তাহ না যেতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফের বন্ধের ঘোষণা এল, যদিও পর্যটনকেন্দ্র খোলা রয়েছে, মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা চলছে, ক্রিকেটের আসর বিপিএলও শুরু হচ্ছে।
এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যে কোনো জনসমাগমে যেতে হলে টিকা সনদ নিয়ে যেতে হবে। এটা সব জায়গায় প্রযোজ্য হবে।
‘বইমেলা, স্টেডিয়াম, বাণিজ্যমেলাসহ সবখানেই এখন থেকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে। সব জায়গায় নিয়ন্ত্রণ করা হবে। হোটেল রেস্তোরাঁয় গেলেও টিকা সনদ নিয়ে যেতে হবে। এটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রশাসনের। আমরা তাদের আবার বলব বিষয়গুলোয় যেন নজরদারি বাড়ায়।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।