ক্রীড়া প্রতিবেদক: এক পক্ষে ছিল অভিজ্ঞতা আর তারকার মিছিল। অন্য পক্ষে দুর্দান্ত ছন্দ আর তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের মঞ্চে বাজিমাত সাবেক বিপিএল চ্যাম্পিয়নদেরই। রাজশাহী কিংসের স্বপ্ন ভেঙে ৫৬ রানে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ট্রফি জিতে নিল সাকিব আল হাসানের ঢাকা। ফাইনালের মঞ্চে দারুণ এক ট্রফির সঙ্গে দলটি পেল দুই কোটি টাকা প্রাইজমানি। রানার্সআপ রাজশাহীর জন্য ৭৫ লাখ টাকা।
গতকাল মিরপুরের শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথমে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫৯ রান করে ঢাকা ডায়নামাইটস। জবাবে ১৭.৩ ওভারে ১০৩ রানে থামে ফাইনালে প্রথমবার উঠে আসা রাজশাহী কিংস। গ্রুপ পর্বে ঢাকাকে দুবার হারালেও আসল লড়াইয়ে পারলো না ড্যারেন স্যামির দল।
বিপিএলে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হতে ১৬০ রান লক্ষ্য ছিল রাজশাহীর। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে রাতে তার পেছনে ছুটতে গিয়ে শুরুতেই নুরুল হাসানকে হারায় পদ্মাপারের দলটি। আবু জয়েদ রাহীর বলে বড় শট খেলতে যেয়েই মিড অফে আন্দ্রে রাসেলের ক্যাচে পরিণত হন তিনি।
দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির রহমাকে নিয়ে দারুণ ব্যাট করেন মুমিনুল। বলে বলে রান নিয়ে রাজশাহীকে জয়ের দিকে নেন তিনি। ৪৩ বলে ৪৭ রানের জুটিও গড়ে তোলেন তারা।
তবে দশম ওভারের শেষ বলে শর্ট ফাইন লেগে বল ঠেলে দেন মুমিনুল। এ সময় অন্য প্রান্তে থাকা সাব্বির সিঙ্গেল নেওয়ার জন্য কল করেন। তাতেই বাধে বিপত্তি। মেহেদী মারুফের সরাসরি থ্রুতে ভাঙে উইকেট। টিভি আম্পায়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দেখা যায়, সাব্বির আউট। সাজঘরে ফেরার আগে ডানহাতি এ মারকুটে ২২ বলে দুই চারে ২৬ রান করেন। কিছুক্ষণ পরই সাকিব আল হাসানের বলে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন মুমিনুল। সাব্বিরের পর ১০ রানের মধ্যে মুমিনুল ও জেমস ফ্রাঙ্কলিন দ্রুত ফিরে যান সাজঘরে। ৭৬ রানে চার উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে রাজশাহী। ৩০ বলে তিন চারে ২৭ রান করেন মুমিনুল। ৫ রান আসে ফ্রাঙ্কলিনের ব্যাট থেকে।
পঞ্চম উইকেটে স্যামিত প্যাটেলের সঙ্গে দলের প্রয়োজনীয় রান তুলতে মাঠে নামেন কিংস অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। জয় থেকে তখনও ৪২ বলে ৮৪ রান দূরে রাজশাহী। আগের বেশ কয়েকটি ম্যাচে একাই এমন কঠিন পথ পাড়ি দিলেও এবার হলো না। সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে মাত্র ছয় রানে ফিরেন সাজঘরে। এরপর আর ‘মিশন ইমপসিবল’কে পসিবল করা সম্ভব হয়নি।
ঢাকার হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন আবু জায়েদ, সাকিব আল হাসান ও সানজামুল ইসলাম। এছাড় একটি করে উইকেট নেন আন্দ্রে রাসেল ও ডোয়াইন ব্রাভো।
এর আগে টস জিতে ঢাকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠান রাজশাহী কিংসের অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। কিন্তু ইনিংসের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি সাকিব আল হাসানের দলের। ৪২ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে সাবেক বিপিএল চ্যাম্পিয়নরা। তবে এক প্রান্তে আগলে ছিলেন এভিন লুইস। তার ব্যাট ভর করে ১০.২ ওভারে ৮২ রান স্কোর বোর্ডে জমা করে দলটি। তখন মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে ঢাকার সমর্থকরা আশা করেছিলেন, বড় সংগ্রহ গড়তে যাচ্ছে দলটি। এর কিছুক্ষণ পরই ফরহাদ রেজার বলে কেসরিক উইলিয়ামের হাতে ধরা পড়েন লুইস। দুর্দান্ত খেলতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ ওপেনার শেষ পর্যন্ত ৩১ বলে ৪৫ রানে থামেন। তার ইনিংসটিতে ছিল ৮টি চার।
ডোয়াইন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল, সাকিব আল হাসানরা ক্রিজে টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। একসময় ১৩০ রানের মধ্যে আটকে যাওয়ার শঙ্কা ভর করেছিল ঢাকা ডায়নামাইটসের ওপর। তবে এক প্রান্তে আগলে রেখে প্রতিপক্ষ বোলারদের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়াই করেন কুমার সাঙ্গাকারা। সাবেক শ্রীলঙ্কান এ কিংবদন্তির ব্যাট থেকে আসে ৩৩ বলে ৩৬ রানের সময় উপযোগী ইনিংস। আর শেষ দিকে সানজামুল ইসলামের ৯ বলে ১২ রানে ভর করে ২০ ওভারে ১৫৯ রানে থামে ঢাকার ইনিংস।
রাজশাহীর হয়ে ৪ ওভারে ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন ফরহাদ রেজা। এছাড়া মেহেদী হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন, ড্যারেন স্যামি, সামিত প্যাটেল ও উইলিয়ামস প্রত্যেকে নেন একটি করে উইকেট।