গ্যাস-সংকটে দেশের শিল্পকারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। পণ্যের প্রত্যাশিত মানও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অনেক দিন ধরেই শিল্পমালিকেরা বলছেন, গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ চান তারা।
গ্যাস-সংকটের কারণে বস্ত্র খাতের ৬০ শতাংশ কারখানা ঝুঁকিতে রয়েছে। সিরামিক-টাইলস দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প। গ্যাস-সংকটে দুভাবে ভুগছে এ শিল্প। বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটরভিত্তিক নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান গ্যাস-সংকটে প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। একই সঙ্গে গ্যাসের প্রয়োজনীয় চাপ না থাকায় টাইলস উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও কমবেশি সমস্যায় রয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরবরাহ-সংকট থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না।
পোশাক খাতের মধ্যে গ্যাসের ব্যবহার বেশি হয় বস্ত্র খাতে তথা টেক্সটাইলে। এ খাতের কারখানাগুলো বেশি ভুগছে গ্যাস-সংকটে। যে প্রতিষ্ঠানের ডায়িংয়ে প্রতিদিন ৬০-৬৫ টন কাপড় রং করা হয়, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে তা নেমেছে ৩০-৩৫ টনে। সময়মতো পোশাক উৎপাদন করতে না পারায় রপ্তানিমূল্যও পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে গ্যাস-সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে শিল্প খাত ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়বে।
জ্বালানি-সংকট নিয়ে শিল্পোদ্যোক্তারা যে কষ্টে আছেন, তা সামনে এনেছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি। শনিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘মেড ইন বাংলাদেশ উইক’ উদ্যাপন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তবে গ্যাস নিয়ে পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা এখনও কষ্ট পাচ্ছেন।
বর্তমানে ডলার-সংকট চলছে। কোনোভাবে গ্যাস আমদানি সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আমাদের দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহের পথ খুঁজতে হবে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি হলেও সমুদ্রে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য সেভাবে অনুসন্ধান চালানো হয়নি। যদিও সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর মিয়ানমার বেশ দ্রুতই গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সমুদ্রবক্ষে যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাস আছে। সেগুলো অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা গেলে এখন যে গ্যাস সংকট রয়েছে, তা হতো না। উচ্চমূল্যের জ্বালানি আমদানি করারও প্রয়োজন হতো না। দেশে গ্যাসের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। বর্তমানে ১২ টিসিএফ গ্যাস মজুত রয়েছে। শিগগির নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে দেশ সম্পূর্ণ উচ্চমূল্যের জ্বালানিনির্ভর হয়ে পড়বে। এতে গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয়ও বাড়বে। বেড়ে যাবে সব ধরনের পণ্যের উৎপাদনমূল্য। তখন শিল্পে অচলাবস্থা দেখা দেবে। এ থেকে উত্তরণে অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে ব্যাপক ভিত্তিতে গ্যাসক্ষেত্রের অনুসন্ধান চালাতে হবে। আমাদের সাগরবক্ষে গ্যাস প্রাপ্তির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে এখন বাংলাদেশের ২৬টি ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি অগভীর ও ১৩টি গভীর সমুদ্রে রয়েছে। বিদেশি কোম্পানিকে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী করতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কারখানায় গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের বিকল্প নেই।