প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

শিশুর জন্য কফ সিরাপ ভালো না মন্দ

শিশু সর্দি-কাশিতে ভুগলে মা-বাবা ও অভিভাবক নিজেদের সিদ্ধান্তে বা দোকানির পরামর্শে কফ-কাশির সিরাপ তাকে সেবন করান। এসব সিরাপ ওভার দ্য কাউন্টার মেডিসিন অর্থাৎ এটি কিনতে ব্যবস্থাপত্র লাগে না। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের মতামত উপেক্ষা করে ২ বছর বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৬ মাস বয়সের নিচের শিশুকে ৪০ শতাংশ মা-বাবা এ ধরনের ওষুধ সেবন করান। এতে নানামুখী বিপদের সম্মুখীন হতে পারে শিশুরা।

শিশু স্বাস্থ্য গবেষণায় কফ-কাশির এসব সিরাপের বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গবেষণা হয়েছে। মূল উপাদান কোডিন, ডেকসট্রো-মিথোরফেন শিশুর জন্য বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেন আমেরিকার চেস্ট মেডিসিনের প্রধান বিজ্ঞানী। অস্ট্রেলিয়ায় দুটি পেডিয়াট্রিকস হাসপাতালে শিশুর খুসখুসে কাশি কমানোর সিরাপ, কফ আলগা করার ওষুধ, অ্যান্টিহিস্টামিন, নাসারন্ধ্র খোলা রাখার ড্রপ, শ্বাসনালি প্রসারণে ব্যবহƒত ব্রঙ্কোডাইলেটর প্রভৃতি ওষুধের চিকিৎসা এবং ওষুধ ছাড়া ব্যবস্থাপনার তুলনামূলক গবেষণা করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে, শিশুর কফ-কাশি লাঘবে উল্লিখিত ওষুধের কোনো বাড়তি ভূমিকা নেই, তবে প্রতিক্রিয়া আছে। এতে শিশু বেশি ঝিমায় এবং বেশি অস্থিরতায় ভোগে। কখনও মারাত্মক বিপদও ডেকে আনে এসব ওষুধ।

সব ক্ষেত্রে কাশি যে অপকারী তা নয়। কাশি শিশুর দেহে জীবাণু প্রবেশে বাধা দেয় এবং দেহের জীবাণু বের করে দেয়ার প্রধান মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। সে জন্য নিজে চিকিৎসা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ক. কফ-কাশিতে আক্রান্ত শিশুর কফ-কাশি লাঘবের পাশাপাশি যে কারণে কাশি বা কফ জমেছে, তার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা করানো বেশি জরুরি। শিশু বয়সে ব্রঙ্কিওলাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য সংক্রমণ, টনসিলের প্রদাহ প্রভৃতি কফ-কাশির  প্রধান উৎস। রোগ শনাক্ত করে তারপর চিকিৎসা করান।

খ. কফ-কাশিতে আক্রান্ত শিশুকে খাওয়ানো ও ঘুম পাড়ানোর আগে ঈষদুষ্ণ জলে পাতলা পরিষ্কার কাপড় ডুবিয়ে তা শলাকার মতো করে নাক পরিষ্কার করে দিলে আরাম পাবে। গ. শিশুর কাশি লাঘবের জন্য বাজারের সিরাপের চেয়ে বেশি নিরাপদ মধু, তুলসী পাতার রস বা লেবু মেশানো কুসুম গরম নিরাপদ জল।

অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী

সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল