সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠান শীতলপুর অটো রি-রোলিং মিলস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় অন্যান্য ব্যাংকের মতো ঋণ সুবিধা নেয়। তবে এক বছর ধরে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ৩১ ডিসেম্বর শীতলপুর স্টিল ২৩১ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটির রড বিক্রি অনেকাংশে কমেছে। ফলে ওয়ান ব্যাংকের মতো অন্যান্য ব্যাংকের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে রয়েছে, যা নিয়ে চিন্তিত ইস্পাত কারখানাটির সঙ্গে লেনদেনে থাকা ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা।
ওয়ান ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকায় অবস্থিত ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠান শীতলপুর অটো রি-রোলিং মিলস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ওয়ান ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় অন্যান্য ব্যাংকের মতো ঋণ সুবিধা নেয়। কভিডকাল থেকে নানা অজুহাতে ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা শুরু করে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কিস্তি পরিশাধেও প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থ হয়। এক বছর ধরে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত ৩১ ডিসেম্বর শীতলপুর অটো রি-রোলিং মিলস ওয়ান ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ২৩১ কোটি ২২ লাখ ৮১ হাজার ৩৮৯ টাকা ঋণ খেলাপি হয়। এ ঋণের বিপরীতে সীতাকুণ্ডে ১১৫ ডেসিমেল, শীতলপুরে ৪৪ ডেসিমেল এবং চট্টগ্রাম শহরের উত্তর কাট্টলীতে ৩৮ দশমিক ৫০ ডেসিমেল জমি বন্ধক রয়েছে। এসব বন্ধকি সম্পত্তির নিলাম আগামী ৫ মার্চ আগ্রাবাদ শাখায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে আগ্রহী ক্রেতা ও প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশ নিয়ে এসব বন্ধকি সম্পত্তি কিনতে পারবেন।
ব্যাংক ও ইস্পাত-সংশ্লিষ্টরা বলেন, ৩০ বছর আগে সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে শীতলপুর অটো রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের বাণিজ্যক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম উদ্দিন এবং পরিচালক আলম, মোহাম্মদ হোসাইন ও মাহবুবুল আলম। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা তিন লাখ টন, যদিও উৎপাদন হতো ৫০ হাজার টনের মতো। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের রড বিক্রি অনেকাংশ কমেছে, যদিও কয়েক বছর আগে জিপিএইচ ইস্পাতের অধীনে রড বানাত। প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রসারিত প্রকল্প উৎপাদনে আসার পর রড বানানো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বর্তমানে উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম সীমিত আকারে চলছে।
শীতলপুর অটো রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ওয়ান ব্যাংকের ঋণ নিয়মিত করার জন্য আমরা চার দিন আগে আলোচনা করেছি। এর মধ্যে তারা ঋণখেলাপি হিসেবে বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আমরা ঋণ পুণঃতফসিল করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা ঋণখেলাপি তালিকা থেকে বের হয়ে আসার জন্য চেষ্ঠা করছি। যদিও এলসি জটিলতায় কাঁচামাল সংকট রয়েছে। এতে বিক্রয়ও কমেছে।
ওয়ান ব্যাংকের নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠান শীতলপুর অটো রি-রোলিং মিলস বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের আগ্রাবাদ শাখা ঋণ সুবিধা নেয়। কভিডকালে থেকে নানা অজুহাতে ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা শুরু করে। আর এক বছর ধরে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়। এ কারণে গত ৩১ ডিসেম্বর শীতলপুর অটো রি-রোলিং মিলস ২৩১ কোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়েছে। যদিও প্রতিবার ঋণ নিয়মিত পরিশোধ করবে বলে, কিন্তু করে না। তাদের বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানেরও মামলা রয়েছে।