প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

শুভ উদ্যোগের বাস্তবায়নে চাই আন্তরিকতা

 

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত বিনিয়োগকারী গড়তে ‘বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম)’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রতিষ্ঠানটির গঠন কাঠামোসহ অন্যান্য বিষয় তুলে ধরে গেজেট প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি। সংবাদটি আনন্দের। এমন প্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আশা করি, এর মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজার এবং এতে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত জ্ঞান আরও সহজ ও সুলভ হবে; উপযুক্ত ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক জ্ঞানচর্চার প্রভাব পড়বে বাজারে। বাজারবিষয়ক জ্ঞানের অভাবে ‘ডে ট্রেডিং’য়ের যে প্রবণতা দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লক্ষ করা যায়, তা থেকেও বেরিয়ে আসতে সচেষ্ট হবেন তারা; মেরিট বিবেচনাপূর্বক শেয়ার কিনে বিনিয়োগ করবেন দীর্ঘ মেয়াদে। বর্তমান সময়ে যার অভাব খুব বেশি অনুভূত হচ্ছে পুঁজিবাজারে।

বস্তুত দেশে পুঁজিবাজারবিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান আহরণ একেবারেই যে দুর্লভ, তা নয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে পড়ানো হয় এ-বিষয়ক কোর্স। আরও কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে বাজারবিষয়ক কোর্স পড়ানো হয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। সেদিক বিবেচনায় বলা যায়, এটি হবে পুঁজিবাজারবিষয়ক জ্ঞান আহরণের বিশেষায়িত ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান। আরও ভালো দিক হলো, বিশেষ কোনো শ্রেণি নয় প্রতিষ্ঠানটির দরজা থাকবে সবার জন্য উম্মুক্ত। এর কোর্সগুলোয় অংশ নিতে পারবেন যে কেউ। আমাদের ধারণা, নিকট অতীতে পুঁজিবাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরায় এর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ যেমন বেড়েছে; উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিও সেটা বজায় থাকবে। এতদিন বিভিন্নজনের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কিংবা নিজ জ্ঞানকে আশ্রয় করে শেয়ারবাজারে যারা বিনিয়োগে এসেছিলেন, এখন তারাও এগিয়ে আসবেন তাত্ত্বিক শিক্ষা নিতে। নিজেদের বিনিয়োগের নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার মাধ্যমে রপ্ত করতে চাইবেন মুনাফা অর্জনের কৌশল। অতীতে এ বাজার ঘিরে যেসব কারসাজি হয়েছিল, বিনিয়োগকারীদের তাত্ত্বিক জ্ঞান এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ভূমিকা রাখবে বলেই মনে হয়।

এটা সত্য, মানুষের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে দেশে শিক্ষার বাজারও বড় হয়ে উঠছে দিন দিন। বিভিন্ন খাতে খরচ বাড়ায় কিছু বিশেষায়িত শিক্ষা চলে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা-সংশ্লিষ্টরা এসব বিষয় বিবেচনায় রাখবেন বলে মনে করি। ভর্তিচ্ছুরা যাতে সহজ শর্তে সুলভে ওখানে ভর্তি হতে পারেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও প্রত্যাশা করি। মনে রাখা ভালো, যত বেশি মানুষ এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেবেন, ততই মঙ্গল। সেজন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রচারে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। দেশের প্রচারমাধ্যমগুলো যদি এ ব্যাপারে এগিয়ে আসে, তাহলে কাজটি সহজ হয়ে উঠবে অনেকটা।

দেশীয় বাস্তবতা ও উপাদান নিয়ে পুঁজিবাজারবিষয়ক গবেষণা খুব একটা চোখে পড়ে না। বিশেষজ্ঞের অভাবও অনুভূত হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। আশা করি, এমন পরিস্থিতি উত্তরণে ভূমিকা রাখবে বিএএসএম। সন্দেহ নেই, অর্থনীতির আকার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে পুঁজিবাজারের ভূমিকাও হয়ে উঠবে আরও গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে শুধু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ওপর শেয়ার কেনাবেচা বা কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিজ্ঞানসম্মত নয়। দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সিংহভাগ এমনটি হওয়া আশঙ্কারও। এমন অজ্ঞতার সুযোগ নিয়েই কিন্তু কারসাজি হয় বাজারে। আমরা চাইবো, পুঁজিবাজার বিষয়ে প্রজ্ঞাসম্পন্ন একটি জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে এ প্রতিষ্ঠান। বাজারের সমকালীন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়েও মানসম্পন্ন একাডেমিক গবেষণা হবে এখানে। এতে যে সংকট এখন আমাদের কাছে অনুভূত হচ্ছে, তাও দূর হবে ক্রমে। কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রয়োজন পরিচালনা-সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। বিএএসএমকে ঘিরে যে আশা সৃষ্টি হয়েছে, এর পরিচালনায় যারা আসবেন জনপ্রত্যাশা পূরণের উপযুক্ত প্রচেষ্টা তাদের মধ্যে থাকবে বলেই প্রত্যাশা।