প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

শেয়ারপ্রতি আয়: এগিয়ে বিএটিবিসি, পিছিয়ে শ্যামপুর সুগার

নিয়াজ মাহমুদ : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দেখে সাধারণত বিনিয়োগ করেন বিনিয়োগকারীরা। ভালো ইপিএসধারী কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা রয়েছে সব সময়। আর শেয়ারপ্রতি আয়ে পিছিয়ে থাকা কিংবা শেয়ারপ্রতি লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোতে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করা থেকে দূরে থাকেন বিনিয়োগকারীরা।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিভিন্ন খাতের ২৯৬টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ইপিএসে শীর্ষে রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি ‘ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড’ (বিএটিবিসি)। আর সবচেয়ে পিছিয়ে অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি লোকসানের শীর্ষে রয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শ্যামপুর সুগার মিলস।

ডিএসইর নভেম্বরের মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

শেয়ারপ্রতি আয়ে শীর্ষ ২০-এর তালিকায় খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের বিএটিবিসির ইপিএস ৯৭ টাকা ৯০ পয়সা। এর পরই রয়েছে স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড। ৯৫ টাকা ৪২ পয়সা ইপিএস বস্ত্র খাতের এ কোম্পানিটির। ৬৮ টাকা ৯৯ পয়সা শেয়ারপ্রতি আয় করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে)। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ ও বাটা সু কোম্পানি।

শেয়ারপ্রতি আয়ে শীর্ষ ২০-এর তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো: রেকিট বেনকিজার (বিডি), রেনেটা লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ, লিন্ডে বাংলাদেশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, যমুনা ওয়েল, পদ্মা ওয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ইউনাইটেড পাওয়ার, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, এপ্রেস ফুডস, গ্রামীণফোন, এসিআই লিমিটেড, জেমিনি সি ফুড ও আরামিট লিমিটেড।

কথা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের সঙ্গে। বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ভালো কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বেশি হয়, যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ে। এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারের জন্য ভালো। ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বাজারের প্রতি সাধারণ জনগণের আগ্রহ বাড়ে।’

তালিকাভুক্তির পর থেকেই ভালো ইপিএস অর্জন করায় আস্থার জায়গা ধরে রেখেছে বহুজাতিক তামাক কোম্পানি বিএটিবিসি। বিক্রি, মুনাফা, রাজস্ব প্রদান ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদানে সব সময় এগিয়ে থাকে কোম্পানিটি। চলতি ২০১৬ হিসাববছরের তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) বিএটিবিসি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৯০ টাকা ৫৩ পয়সা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময় কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৭২ টাকা ৯৮ পয়সা। এ কোম্পানির মোট শেয়ারের ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশ রয়েছে পরিচালকদের হাতে। সরকার ধারণ করছে দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যথাক্রমে ১১ দশমিক ১৩ ও ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ার।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছে বেশি থাকলে তারা লাভবান হয়। সে সঙ্গে এসব কোম্পানির প্রতি তাদের আস্থাও বাড়ে।

অন্যদিকে শেয়ারপ্রতি আয়ে সবচেয়ে বেশি লোকসানে থাকা শ্যামপুর সুগার মিলসের শেয়ারপ্রতি লোকসান ৬৭ টাকা ৫২ পয়সা। এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জিলবাংলা সুগার মিলস। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ৫৬ টাকা ৮৯ পয়সা। শেয়ারপ্রতি ১৯ টাকা ৬৯ পয়সা লোকসান করে এ তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে জুট স্পিনার্স লিমিটেড। আর্থিক খাতের পিপলস লিজিং এবং দুলামিয়া কটন স্পিনিং শেয়ারপ্রতি লোকসানের শীর্ষ তালিকায় যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেয়ারপ্রতি লোকসানের শীর্ষ ২০-এর তালিকায় থাকা বাকি কোম্পানিগুলো হলো: মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রাইম ফিন্যান্স, সোনারগাঁ টেক্সটাইল, আজিজ পাইপ, সাভার রিফ্রেক্টরিজ, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, উসমানিয়া গ্লাসশিট, ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্ক, কে অ্যান্ড কিউ, সোনালী আঁশ, রহিমা ফুড, মেঘনা পেট, শাইনপুকুর সিরামিকস ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।

শেয়ারপ্রতি আয়ে সবচেয়ে বেশি লোকসানে থাকা শ্যামপুর সুগার মিলসের লেনদেন হয় ডিএসইর ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে। ১৯৯৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানির সবশেষ শেয়ার ১৯ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়। প্রতি বছরই কোম্পানির লোকসান বাড়ছে। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৫১ দশমিক ৮৯ শতাংশ সরকারের হাতে রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার রয়েছে যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং ৩২ দশমিক ৫১ শতাংশ।