এমএস রুকন, গাজীপুর: চলমান আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে সমন্বয় করে আন্দোলন যেতে পারে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা। এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ অঞ্চলের অনেক মিল-কারখানার মালিকরা। আন্দোলনের শঙ্কায় দিন কাটছে এ এলাকার পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের। আন্দোলন ছড়ালে কারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে সব ধরনের তৈরি পোশাকের কারখানা বন্ধ করে দিতে পারেন মালিকরা। এতে করে এ অঞ্চলের ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা আর্থিক লোকসান হতে পারে বলে জানা গেছে।
গাজীপুর সদরের বানিয়ারচালায় পলমল গ্রুপের কর্টজ অ্যাপারেল লিমিটেডের উৎপাদন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম বলেন, আমরা মালিকপক্ষ সবাই চাই কোথাও যেন শ্রমিক অসন্তোষ না হয়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি আরও জানান, শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে যাতে কেউ আন্দোলন করতে না পারে সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে। শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পরিচালক সোহেব আহমেদ বলেন, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের যাতে না ঘটে, সে জন্য এ অঞ্চলের সব শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে এ অঞ্চলের শিল্প-কারখানাগুলোকে। যাতে করে কেউ শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে আন্দোলনে নামাতে না পারেন। আমি শিল্প-কারখানার মালিকদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, কারখানার যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক আকাশ আহমেদ বলেন, কারখানার শ্রমিকরা অধিক সময় কাজ করছেন। বিনিময়ে ন্যায্য বেতন-ভাতা পান না। বেতন-ভাতা দাবি করলেই মালিকরা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা করেন। শ্রমিকরা পেটের দায়ে আন্দোলন করে, রাস্তায় নামে। তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো আন্দোলনের ডাক দেব না। তবে সাধারণ শ্রমিকরা যদি রাস্তায় নেমে আসে তাহলে আর আমাদেরও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালনের সুযোগ থাকবে না। বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের মতো গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে আন্দোলন ছড়ালে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হলে, ওই অঞ্চলের কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হবে। ক্রেতারা যখন ভারতের উত্তর প্রদেশে যাওয়ার কথা ভাবছেন, তখন হঠাৎ করে আন্দোলনে ফোসে উঠার ঘটনা হতাশাজনক এবং অর্থনীতিতে এক অশনি সংকেত। যে কোনো সময় ফুসে উঠতে পারে এ অঞ্চলের গামের্ন্টস, সোয়েটার, টেক্সটাইল, নিটিং, ওয়াশিং, ডায়িং, প্রিন্টিং, প্যাকেজিংসহ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ-এ কর্মরত শত শত সাধারণ শ্রমিকরা।
স্থানীয় শ্রমিক ও সংগঠনের সূত্রে জানা যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পরিবহন ভাড়া, পারিবাহিক ব্যয়ভার বেড়ে যাওয়ায় ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা করাসহ ১০ দফা দাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে যেতে পারে কালিয়াকৈর এলাকার কিছু তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে আন্দোলনের জন্য গোপনে সংঘটিত হচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুরের আমান, ফখরুদ্দিন, এ্যাপেক্স, মেঘনাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা। আন্দোলনের প্রস্তুতির খবর পাওয়া গেছে টঙ্গী থানার বেশ কয়েকটি মিল-কারখানায়ও। শ্রমিকদের ২০ দফা দাবি থাকলেও মোট ১০ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনের জন্য চূড়ান্ত করেছে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা।