প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

শ্রমিক ধর্মঘটের জের: ৫৫ কারখানা বন্ধ ঘোষণা মালিকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: আশুলিয়ার বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় কয়েক দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করে আসছেন শ্রমিকরা। নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শ্রমিকদের কাজে ফেরানো যায়নি। ফলে ৫৫টি পোশাক কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মালিকরা। গতকাল মঙ্গলবার থেকে সংশ্লিষ্ট কারখানায় এ-সংক্রান্ত নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনের বরাত দিয়ে মালিকরা জানিয়েছেন, বন্ধ ঘোষণার দিন থেকে শ্রমিকদের কোনো বেতন দেওয়া হবে না। তবে শ্রমিকরা কাজে ফিরলে আবার কারখানাগুলো চালুর আশ্বাস পাওয়া গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিজিএমইএ সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা নানা ধরনের বৈশ্বিক ও আর্থিক সংকট মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় শান্ত শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে বহিরাগতদের উসকানিতে আশুলিয়া এলাকার শ্রমিকরা নতুন

মজুরি কাঠামো ও মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে, কর্মবিরতি পালন করছে।’

তিনি বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর মজুরি কমিশন গঠনের বিধান আছে। সর্বশেষ ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর তিন বছর পার হয়েছে। আরও দুই বছর পর মজুরি কমিশন গঠন করা যেতে পারে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন, রাবাব গ্রুপের চেয়ারম্যান লুতফে এম আইয়ুব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় মালিকরা জানান, ৯ দিন ধরে আশুলিয়া অঞ্চলে শ্রম সমস্যা বিরাজ করছে। শুরুতে একটি কারখানায় সমস্যা থাকলেও পরে তা তিন-চারটি কারখানায় সীমাবদ্ধ থাকে। তবে গত তিন দিনে এ সমস্যা বেড়েছে। শ্রমিকরা কারখানায় এসে হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, এ নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বাসায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুসহ ৪২টি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে বৈঠক হয় সোমবার রাতে। তাতে শ্রমিকরা কাজে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানালেও পরদিন কারখানাগুলোয় কাজ শুরু হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, ‘এ অবস্থায় যে কারখানাগুলোয় শ্রমিকরা কাজ করবেন না, আমাদের উদ্যোক্তারা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য আশুলিয়া এলাকায় তাদের ওই কারখানাগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হলেন। এ পরিস্থিতিতে কোনো শ্রমিক কারখানায় কাজ না করলে আইন অনুযায়ী ওই সময়ের জন্য কোনো বেতন পাবেন না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘কারখানার সুপারভাইজার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিকরা যোগাযোগ করে কাজ শুরু করতে চাইলে কারখানা চালু করা হবে।’

মালিকরা আরও জানান, চলতি অর্থবছরে দেশের প্রবাসী আয় ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমেছে। এ অবস্থায় রফতানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের দিকে বিশেষ মনোযোগ জরুরি।

এদিকে গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি এতে বলেন, ‘এ কর্মবিরতির কারণ কী, অনেক শ্রমিকই তা জানেন না। কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে শ্রম আইন অনুযায়ী তা পেশ করতে হয়। কিন্তু শ্রমিক নেতারা কোনো চাহিদার কথা সরকারকে বলেননি। যদি শ্রমিক ইউনিয়ন, ট্রেড ইউনিয়ন, ট্রেড ফেডারেশন এই কর্মবিরতি সম্পর্কে না জানে, তাহলে এটা কারা করছে? কোনো একটা গ্রুপ উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টরের ক্ষতি করতে এ কাজ করছে, আমরা এটা খতিয়ে দেখব।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘অন্যায়ভাবে যদি দাবি আদায় করতে চান তাহলে সরকার এ ব্যাপারে কঠোর। কারণ এ সেক্টর আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সেক্টরে কোনো অন্যায় আবদার, কোনো অসৎ পথে, পেছনের পথে কেউ যদি কিছু করতে চান সেটা বরদাস্ত করা হবে না।’ এ সময় শ্রমসচিব মিকাইল শিপারসহ শ্রম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গার্মেন্ট শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ১১ ডিসেম্বর থেকে আশুলিয়ার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩৯(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর মজুরি বৃদ্ধির জন্য সরকার মজুরি বোর্ড গঠন করবে। সে অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধির প্রশ্ন দেখা দিলে শ্রমিক বা মালিক বা উভয় পক্ষ সরকারের কাছে এ বিষয়ে আবেদন করতে পারে। কিন্তু এ পর্যন্ত এ ধরনের কোনো আবেদন করা হয়নি। ফলে এ আন্দোলন শ্রম আইন সম্মত নয় বরং শ্রমিক আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে কেউ কেউ হঠকারিতার আশ্রয় নিয়েছে।’ বিবৃতিতে শ্রমিকদের কারখানায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার শেয়ার বিজকে জানান, ‘শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে ১৬ হাজার টাকা করার দাবি করা হয়েছে। দাবিটির প্রতি নীতিগতভাবে শ্রমিক নেতা হিসেবে আমরা একমত। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় এ দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, তা আইনসম্মত হয়নি। কোনো স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের নেতৃত্বেও এ আন্দোলন হয়নি। এর পেছনে কারা জড়িত আছে, তা স্পষ্ট নয়’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

ট্রেড ইউনিয়ন প্রশ্নে বিজিএমইএ’র সভাপতি জানান, ‘পাঁচ শতাধিক ফেডারেশন আছে। তাছাড়া কারখানাগুলোতে শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নির্বাচিত পার্টিসিপেশন কমিটি রয়েছে। সেসব কমিটি থেকেও এ বিষয়ে কোনো দাবি ওঠেনি।’