নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর হাজারীবাগ হতে ট্যানারি শিল্প-কারখানাগুলো স্থানান্তরের নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু এ ঘোষণা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। পরিবেশবিদরা একে সরকারের ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করে জনসম্মুখে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর ডিআরইউ গোলটেবিল মিলনায়তনে ‘বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘ট্যানারি স্থানান্তরে ব্যর্থ হলো সরকারি ডেটলাইন ২০১৬, বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীসহ একাধিক নদী করণীয় কী?’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বুড়িগঙ্গার ৬০ শতাংশ দূষণ হচ্ছে শিল্প-কারখানার কারণে। হাজারীবাগে সাত হাজার ট্যানারি শিল্প-কারখানা রয়েছে। ওয়াসা, সিটি করপোরেশনসহ সরকারের কারণে ৩০ শতাংশ দূষণ হচ্ছে। ১০ শতাংশ দূষণ হচ্ছে গৃহস্থালির কারণে। শ্যামপুরের ৪২ কারখানার বর্জ্য যাওয়ার লাইন সরাসরি বুড়িগঙ্গায়। সব মিলে প্রতিদিন দুই কোটি ১৬ লাখ লিটার বর্জ্য যাচ্ছে বুড়িগঙ্গায়।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাপার জাতীয় পরিষদ সদস্য এমএস সিদ্দিকী, গ্রিন ফয়েসের সমন্বয়ক আলমগীর কবির ও রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা ও বুড়িগঙ্গা রিভারকিপারের যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘ট্যানারি নিয়ে অনেক সংবাদ হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। এ বিষয়ে সরকারের জবাবদিহিতা থাকতে হবে। সরকার যে ঘোষণা দিয়েছে, তা পালন হয় কি না, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। আমরা নদী বাঁচাতে চাই। পরিবেশ রক্ষা করতে চাই। ঘোষণা অনুযায়ী সব ট্যানারি স্থানান্তর কাল্পনিক গল্পের দৈত্য দিয়েও সম্ভব নয়। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তাহলে সরকার ব্যর্থ। ডেটলাইন অনুযায়ী কেন ট্যানারি স্থানান্তর করা গেল না? সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ কী তা সুস্পষ্টভাবে জনসম্মুখে পরিষ্কার করতে হবে। বুড়িগঙ্গা দূষণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মালিক পক্ষের। এজন্য উভয়কেই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।’
শরীফ জামিল বলেন, ‘সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ট্যানারি স্থানান্তরের ডেটলাইন ছিল ৩১ ডিসেম্বর। এর মধ্যে মাত্র ৩৪টি কারখানার আংশিক স্থানান্তর করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে বাকি সব কারখানা স্থানান্তর অকল্পনীয়। এ অবস্থায় সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সরকার আদৌ নিজেদের করা ঘোষণা ও কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কি না, তা স্পষ্ট করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের ডেটলাইন দিয়েছিল সরকার। তা না হলে ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। একই সঙ্গে সব কারখানায় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করারও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।