প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

সংসদ এখন ‘একদলীয় ক্লাব’: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার জাতীয় সংসদকে “একদলীয় ক্লাবে” পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, “আপনারা দেখুন, গণতান্ত্রিক যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে, প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ওরা ধ্বংস করেছে। পার্লামেন্ট। পার্লামেন্ট কী? এখন যে পার্লামেন্ট তারা তৈরি করেছে একটা কোনো পার্লামেন্ট? একটা একদলীয় একটা ক্লাব তৈরি করেছে। ইটস আ ক্লাব অব আওয়ামী লীগ।”

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সরকার দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা “ধ্বংস করে দিয়েছে” অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের গেটওয়ে হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থা। নির্বাচন করে আপনি দেশ চালনার জন্য পার্লামেন্ট তৈরি করবেন, মন্ত্রিসভা গঠন করবেন, তাই না? সেই নির্বাচনী ব্যবস্থাটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষ ভোটই দিতে যায় না। ভোট দিয়ে কি হবে? ভোট তো আমার থাকবে না, আমার ভোট তো অন্য নিয়ে যাবে। এ জন্য যতকিছু কারসাজি করা দরকার তারা (সরকার) করেছে। কখনো ১৫৪ জনকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ঘোষণা করে দেওয়া, কখনো যে তারিখে ভোট, তার আগের রাত্রে ভোট নিয়ে নেওয়া, ভোট করে নেওয়া এবং সমস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তাদের পক্ষে ঘোষণা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা।”

বিএনপির ২৭ দফা নিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চয় এটা জনগণের সামনে তুলে ধরব। এটা একটা ড্রিম। ড্রিম ছাড়া কখনো সফল হওয়া যায় না। আমরা স্বপ্ন দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদকে বলব, এ বিষয়ে সারাদিন ধরে ওয়ার্কশপ করুন। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পেশাজীবীদের নিয়ে মতামত নিয়ে আমরা যেন পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দিতে পারি, সেজন্য উদ্যোগ নেবেন।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রত্যেকটা জিনিসের উত্থান-পতন আছে, সামনে আগানো, পেছানো যাওয়া… সেই টেউয়ের মত। যে টেউ শুরু হয়েছে উত্তাল তরঙ্গের মত, সমুদ্রের মত, এরা ভেসে যাবে। কারণ এদের সাথে জনগণ নাই, জনগণ থাকবে না। আমাদের শেষ কথা, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা যে ১০ দফা দিয়েছি, সেই ১০ দফার প্রথমেই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই সরকার অবৈধ সরকার। সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে।

ফখরুল বলেন, “একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে সেই সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে ইনশাল্লাহ আমরা জয়ী হব।”

১৪ বছর ধরে সরকার পতনের আন্দোলনে সাফল্য না এলেও নেতাকর্মীদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “অনেকের কথায় আমি হতাশার একটু ছাপ খুঁজে পাই। কেন হতাশ হবেন? আমরা তো সাকসেসফুল হচ্ছি, প্রতিটা স্টেপে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে আমি জেলে গেছি, আমি একা জেলে যাইনি তো। হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেলে গেছেন। তাদের মুখে আমি এতটুকু হতাশার ছাপ দেখিনি। কারণ এই লড়াইটা শুধু আমার লড়াই নয়, এই লড়াইটা আমার দেশের লড়াই, এই গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার… শুধু আমার জন্য নয়, সমগ্র মানুষের জন্য জাতির জন্য। দুর্ভাগ্য আমাদের, আজকে ৫০ বছর পরে এসে আমাকে এই কথাগুলো বলতে হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিপক্ষ যারা, তারা প্রবল প্রতাপশালী, ক্ষমতাশালী। তাদের হাতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র, তাদের হাতে বন্দুক, তাদের হাতে পিস্তল-গ্রেনেড। অবলীলাক্রমে তারা সেগুলো মারে, উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। আমরা এক অসম লড়াইয়ে আছি।”

পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যে জিয়া পরিষদের জিয়া পরিষদের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাকির হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের ডা. রফিকুর ইসলাম বাচ্চু, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এ্যাবের আসাদুজ্জামান চুন্নু, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের শহীদুল ইসলাম তাদের এই আলোচনায় মতামত তুলে ধরেন।