প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

সজাগ থাকুক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা

শেয়ার বিজে প্রকাশিত দুটি খবরের শিরোনাম ‘কারণ ছাড়াই বাড়ছে তিন কোম্পানির শেয়ারদর’ ও ‘বিক্রেতা সংকটে ছয় কোম্পানির শেয়ার হল্টেড’। প্রতিবেদন দুটি কোনো শুভবার্তা দেয় না। বরং পুঁজিবাজার-সচেতন যে কোনো পাঠকের মনে তা সংশয় জাগিয়ে তুলবে বলেই ধারণা। খেয়াল করার মতো বিষয় হচ্ছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্র জানাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড ও এ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ারদর। একই সূত্র জানাচ্ছে, অন্য দুই কোম্পানি বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো) ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) লিমিটেডের শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধিরও কোনো সঙ্গত কারণ নেই। এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন চালুর শুরুতেই বিক্রেতা সংকটের কারণে হল্ট (বন্ধ) করে দেওয়া হয় সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস লিমিটেড, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, দুলামিয়া কটন মিলস লিমিটেড, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড ও অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন। উল্লিখিত ছয় কোম্পানির শেয়ার লেনদেনই হল্ট হয়ে যায় সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ হওয়ায়। এমন পরিস্থিতিতে উপরোক্ত ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ না জেগে পারে না।

এখানে জোর দিয়ে বলা দরকার, স্থানীয় পুঁজিবাজারে ইদানীং খানিকটা হলেও চাঙাভাব দেখা দিয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কেউ কেউ একে চাঙাভাব না বলে বলতে চান, বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তবে অভিব্যক্তিগুলো যেভাবেই প্রকাশ করা হোক না কেন, মূল কথা হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আবার আগ্রহী হচ্ছেন বাজারের প্রতি। অস্বীকার করা যাবে না, এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনার যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি অবদান রয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার। আবার অবস্থা পরিদৃষ্টে কৌতূহলী হয়েছেন বিনিয়োগকারীরাও। কথা হলো, বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আগ্রহী হলে শেয়ারদর বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। ফলে খতিয়ে দেখা দরকার, শুধু বিনিয়োগকারীদের বাড়তি অংশগ্রহণের কারণেই আলোচ্য ঘটনা ঘটছে কি না। যদি কেবল সে কারণেও একশ্রেণির শেয়ারের দর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, তার পরও বিনিয়োগকারীদের আঘাত না করে এ ধরনের ঘটনা যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। কেননা বাজার নিয়ে অস্বাভাবিক উত্তেজনা অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে পর্যবসিত হতে পারে। এখানে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের শঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেউই বলতে চাইবেন না, ওই কোম্পানিগুলোই এর সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বাইরের কারও দ্বারা কোনো ধরনের সন্দেহজনক লেনদেন সাধিত হচ্ছে না তার ওপর বাড়তি নজরদারি করা দরকার। বিনিয়োগকারীরা আশা করেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের দৃশ্যমান পদক্ষেপই দেখতে চাইবো আমরা। সেক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। এক. বাজারের বিদ্যমান স্থিতিশীলতা যেন অক্ষুন্ন থাকে। ফলে বিনিয়োগকারীদের সংবেদনশীলতার প্রতি অধিক জোর দেওয়া দরকার। দুই. যদি কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ওই ধরনের সন্দেহজনক কার্যক্রমে জড়িত হয়ে পড়ে, তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা। বিএসইসি এক্ষেত্রে যত্নের ত্রুটি দেখাবে না, এটাই কাম্য এখন।