নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন ক্ষুদ্র সবজি ব্যবসায়ী কারওয়ান বাজার থেকে সংগ্রহ করেন প্রায় সব ধরনের সবজি। পাল্লাদরে বিক্রি হয় সব ধরনের সবজি। কারওয়ান বাজার থেকে সংগ্রহ করা এসব সবজি খুচরা বাজারে বিক্রি হয় পাইকারি দরের চেয়েও অনেক বেশি দামে। এদিকে আরেক দফা বেড়েছে চালের দাম। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ কেজির প্রতি পাল্লা মুলা ১০০ টাকা, শালগম ১৩০, শিম ১৭০, পাতা পেঁয়াজ ১০০ টাকা, ধুন্দল ১৫০, করলা ১৮০-২০০, কাঁচা টমেটো ১৫০, পাকা টমেটো ৫০০-৫৩০, বরবটি ২৪০, বেগুন ১৫০-২০০, ধনিয়া পাতা ৩৫০, চিচিঙ্গা ১৫০, পটোল ১২০, আলু সাদা ১১০ ও লাল ১২০, নতুন আলু ২৫০, গাজর ২৫০, ঢেঁড়স ১৬০ এবং কাঁচামরিচ ১৩০ টাকা।
আরও দেখা গেছে, লতি পাল্লাপ্রতি (পাঁচ কেজি) ২২০ টাকা, জলপাই ১০০, বাঁধাকপি প্রতিটি ৩০ টাকা এবং লেবু প্রতিটি এক থেকে আড়াই টাকা। মাঝারি সাইজের ফুলকপি প্রতিটি ১২-১৫ টাকা ও বড় সাইজ ২০ টাকা, কাঁচকলা ২০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।
পাতা পেঁয়াজ বিক্রেতা আব্দুল আজিজ বলেন, বাজার খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। পাতা পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২১ টাকা কিনা হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে ১৯ থেকে ২০ টাকায়। গত বৃহস্পতিবার ১৭ টাকা কেজিতে কিনে বিক্রি করতে হয়েছে ১৫ টাকায়। অন্যান্য শীতের সময় যে পরিমাণ চাহিদা থাকে, এবার চাহিদা তেমন নেই, তাই বিক্রিও কম।
ঢেঁড়স বিক্রেতা আব্দুল বারেক বলেন, আমি সব সময় ঢেঁড়স নিয়ে আসি। আমি প্রায় ৩০০ কেজি ঢেঁড়স নিয়ে এসেছিলাম, যার মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ কেজির মতো আছে। ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা পাল্লা ধরে বিক্রি করছি, দাম বেশ কিছুদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। পাইকারি বাজারে দামের খুব একটা কমবেশি হয় না, দু-এক টাকা ওঠানামা করে।
বেগুন বিক্রেতা সোহাগ বলেন, বেগুনের চাহিদা আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সবাই বলাবলি করছে, বেগুনে নাকি ক্যানসার রয়েছে। এমন কথা ছড়িয়ে পড়ার পর বেগুনের চাহিদা প্রায় তলানিতে। আগের চেয়ে অনেক কম চাহিদা, তেমন ব্যবসা নেই। খুব একটা বেচাকেনা হচ্ছে না। আগে যেখানে ৫০০ থেকে ৭০০ কেজিতে বেগুন বিক্রি হতো, তা এখন ২৫০ থেকে ৩০০ কেজিতে নেমে এসেছে।
ট্রাকভর্তি ফুলকপি নিয়ে বিক্রি করতে কারওয়ান বাজারে এসেছেন আব্দুল মোতালেব। তিনি বলেন, আমার ফুলকপিগুলো মাঝারি সাইজের, ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি করেছি। অন্যান্য বারের থেকে এ বছর দাম কিছুটা কম। শীতের শুরুর দিকে দাম সবসময় ভালো পাওয়া যায়। তবে এবার বাজারে চাহিদা একটু কম মনে হচ্ছে, ফলে দামটাও আশানুরূপ পাচ্ছি না।
সবজি ক্রেতা তারেক মাহমুদ বলেন, সবজির বাজার সবসময় ঊর্ধ্বমুখী থাকে, বলতে গেলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সরকারিভাবে নিয়মিত মনিটরিং করা হলে দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এতে বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষেরা বেশি উপকৃত হবে। প্রতি কেজি সবজি পাইকারি মূল্যের চেয়ে খুচরা মূল্য অনেক বেশি। আয় না বাড়লেও দিন দিন সংসারের খরচ বেড়েই চলছে।
এদিকে আরেক দফা বেড়েছে চাল, তেল, আটা, ময়দা ও চিনির দাম। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে মোটা চালসহ সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে।
সরকারের বিপণন সংস্থার (টিসিবি) তথ্যমতে, চিকন চালের দাম কেজিতে তিন টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা, মাঝারি বা পাইজাম চাল দুই টাকা বেড়ে ৫৪ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ৪৮ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছে, টিসিবির তথ্যের চেয়ে কেজিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। এদিকে প্যাকেট আটা কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা, আর খোলা আটা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট ময়দা কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ৭২ টাকার ময়দা এ সপ্তাহে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৮০ টাকা কেজি দরের প্যাকেট ময়দা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা করে।
বেড়েছে গুঁড়োদুধের দামও। ৭৫০ টাকা কেজি দরের ডানো গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে ৮২০ টাকা দরে। ৭৫০ টাকা কেজি দরের ডিপ্লোমা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। একইভাবে অন্যান্য গুঁড়োদুধের দামও বেড়েছে।
গত ১৭ নভেম্বর থেকে সয়াবিন তেল ও চিনির দাম আরও বেড়েছে। এখন সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। আগের চেয়ে কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১২ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি কেজিতে ১২ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ১০৭ টাকায়, যদিও বাজারে নির্ধারিত দামের তেল পাওয়া গেলেও চিনি কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। সরবরাহ সংকটের কারণে বাজারভেদে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।