প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

সবুজ প্রকৃতিতে রঙিন প্রজাপতির ওড়াওড়ি

জাবিতে প্রজাপতি মেলা ২০২২

নোমান বিন হারুন, জাবি : ‘প্রজাপতিটা যখন তখন, উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে রাঙা মেঘের মতন’- গানের তালে তালে দিনভর নানা বর্ণের প্রজাপতির উড়াউড়িতে মুখর ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আর প্রজাপতির রঙিন ডানায় চড়ে কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতে মেলায় ভিড় জমিয়েছিল ছোট্ট শিশুরা। কেউবা পরে এসেছিল প্রজাপতির সাজপোশাক; পিঠে লাগিয়েছে বর্ণিল ডানা- যেন প্রত্যেকেই একেকটা প্রজাপতি। ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি হাট দর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড়ানোর চমৎকার সব আয়োজনে উচ্ছ্বসিত ছিল শিশুরা।

‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ স্লোগানকে ধারণ করে প্রজাপতি মেলা-২০২২ আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখা। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ^বিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সম্মুখে প্রজাপতি মেলার উদ্বোধন করেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শেখ মো: মনজুরুল হক।

প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দিনব্যাপী এ মেলার নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল নৃত্য, শিশু কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি হাট দর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, অরিগামি প্রতিযোগিতা, বারোয়ারি বিতর্ক, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে।

এবছর প্রকৃতি সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য তরুপল্লব সংগঠনকে ‘বাটার ফ্লাই অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী দীপ্ত বিশ্বাসকে ‘বাটার ফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে মেলা উপলক্ষে ক্যাম্পাসে প্রজাপতিপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। প্রজাপতি মেলা দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রজাপতিপ্রেমীরা ক্যাম্পাসে ছুটে এসেছেন। বিশেষ করে বাহারি রঙ্গের প্রজাপতি দেখে শিশুদের উচ্ছ্বাস থাকে চোখে পড়ার মত। ঢাকার ধানমন্ডি থেকে বাবার সাথে প্রজাপতি মেলা দেখতে এসেছেন আইমান। ছোট্ট শিশু আইমান বলেন, মেলায় এসে লাল-নীল প্রজাপতি দেখে ভালো লাগছে। ছবি আঁকা ও ঘুড়ি উড়িয়েছি খুবই ভাল লাগছে। আমি প্রজাপতির উপর দুইটা বই কিনেছি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য বলেন, প্রজাপতির সৌন্দর্য আমাদের মনকে আপ্লুত করে। প্রজাপতি না থাকলে পরাগায়ন হবে না। তাই প্রকৃতিতে প্রজাপতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। পরিবেশ-প্রকৃতি আমাদের নিত্য অনুষঙ্গ। প্রকৃতি ভালো থাকলে মানুষ ভালো থাকবে। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার রক্ষার জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

মেলার আহ্বায়ক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হলে প্রকৃতিও বিরূপ আচরণ করে। ছোট্ট কীটপতঙ্গ আমাদেরকে কীভাবে আলোড়িত করতে পারে, প্রজাপতি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে প্রজাতির সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমছে। আগে বাংলাদেশে সাড়ে চার শত প্রজাতির প্রজাপতি লক্ষ করা যেত। সেই সংখ্যা এখন কমে এসেছে। আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি লক্ষ্য করা যেত। এখন এই ৫২ তে নেমে এসেছে। প্রজাপতিকে রক্ষায় পরিবেশকে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, বন অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ, কিউট প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ মাতলুব আক্তার, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান প্রমূখ।

উল্লেখ্য, প্রজাপতির প্রতি গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে ২০১০ সালে সর্ব প্রথম ক্যাম্পাসে প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে প্রতিবছর নানান আয়োজনে প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।