নিজস্ব প্রতিবেদক : তেলের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে সয়াবিন ও পাম তেলে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ২ জানুয়ারি এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সই করা পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভ্যাট প্রত্যাহারের মেয়াদ শেষ। অস্থির তেলের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে পরিশোধিত ও পাম তেলের উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয় সরকার। এতদিন তেলের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হত।
এনবিআর সূত্রমতে, তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ সংক্রান্ত চিঠি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন, পরিশোধিত-অপরিশোধিত পামতেলের মূল্যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিবেচনা করে স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্যে স্থিতিশীলতা আনতে গত ৪ অক্টোবরে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিশোধিত সয়াবিন ও পামতেলের স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত সমূদয় মূল্য সংযোজন কর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহতি প্রদান করা হয়। পরে একই মেয়াদে গত ১৬ মার্চ অপর এক আদেশে অপরিশোধিত সয়াবিন ও অপরিশোধিত পামতেলের আমদানি পর্যায়ে আরোপনীয় মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ অবস্থায় রমজান ও ঈদুল ফিতরে ভোজ্যতেলের মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পুনরায় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন, পরিশোধিত-অপরিশোধিত পামতেলের মূল্য কিছুটা হ্রাস পেলেও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের মূল্য আনুপাতিক হারে হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি হিসাবেই পূর্বে ১ ডলার সমান ৮৬ টাকার স্থলে বর্তমানে ১ ডলার সমান ১০৬ টাকা বা তার বেশি। এ করণে আসন্ন রমজান ও ঈদুল ফিতরে ভোজ্যতেলের মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পুনরায় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
সূত্রমতে, বর্তমানে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা আছে। এর মধ্যে ২ লাখ টন স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। বাকি ১৮ লাখ টন আমদানি করা হয়। আমদানি হয় প্রধানত সয়াবিন ও পাম তেল। এই দুই ধরনের তেল পরিশোধিত ও অপরিশোধিত অবস্থায় ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে আসে। বছরে প্রায় ১১ লাখ টন অপরিশোধিত পাম তেল আমদানি হয়। আর অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয় পাঁচ লাখ টন। এ ছাড়া ২৪ লাখ টন সয়াবিন বীজ আমদানি হয়। এসব বীজ থেকে চার লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল কোম্পানিসহ দেশের পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে দেশের বাজারে সরবরাহ করে। এই পরিশোধন ব্যবস্থাকে স্থানীয় উৎপাদন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্প্রতি ভোজ্যতেলের দাম কয়েক দফা বেড়েছে।