ভূমি ব্যবস্থাপনা সহজীকরণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্য সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়েছে এবং সরকারের স্বীকৃতিও মিলেছে। ই-নামজারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি অনেক কমেছে। দাপ্তরিক কাজে সরকারি ফি কম হলেও ভূমি অফিসকেন্দ্রিক দালালচক্রের হয়রানির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সেবাগ্রহীতাকে কয়েকগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হতো। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি ডিজিটাইজড করার উদ্যোগ নেয় সরকার। ১ জুলাই ২০২০ পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় একযোগে শতভাগ ই-নামজারি বাস্তবায়ন শুরু হয়। ফলে অনিয়ম কমার পাশাপাশি দালালদের দৌরাত্ম্য কমেছে। হয়তো শতভাগ কমেনি, কিন্তু জনমনে স্বস্তি এসেছে।
ভূমি নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনও জটিল ও হয়রানিমূলক রয়ে গেছে। এটি কমবেশি সবাই জানেন। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দুদকের চিঠি: সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অবৈধ লেনদেনে উমেদার’ শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে অনেক বিষয় জানা গেল। যেমন, সেবাগ্রহীতারা দালালের খপ্পরে পড়ছেন, দ্রুত সেবা পেতে উৎকোচ দিতে বাধ্য হচ্ছেন সেবাগ্রহীতা, প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। ভূমি নিবন্ধন সেবা পেতে তৈরি করা হয় জটিলতা। বাধ্য করা হয় দালাল ধরতে। যার সুযোগ নিয়ে অবৈধ লেনদেনে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন অনেকে! সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে এসব ঘটনা ঘটছে। নিয়োগবহির্ভূত অনেক লোক রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে কাজ করেন, যাদের উমেদার (পিয়ন) বলে। অধিকাংশ অবৈধ লেনদেন তাদের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক।
ভূমি নিবন্ধন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ কী পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হন, তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। কিন্তু তারা বিষয়টি সাজিয়ে-গুছিয়ে বলতেও পারেন না। দুদক বিষয়টি খতিয়ে দেখে সীমাবদ্ধতাগুলো বের করেছে। সাধারণ মানুষের অর্থ এভাবে সংঘবদ্ধ চক্র হাতিয়ে নেবে, রাষ্ট্র নীরব থাকতে পারে না। দুদক বলেছে, সরকারও প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সময়মতো ভলিউমে কপি যুক্ত না হওয়ায় মূল দলিল সরবরাহ করতে বিলম্ব হয় এবং সার্টিফাইড কপি সরবরাহেও জটিলতার সৃষ্টি হয়। তাতে সেবাগ্রহীতা দালালের খপ্পরে পড়ছেন এবং সেবা পেতে উৎকোচ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। দলিল নিবন্ধনের সময় সরকারি রাজস্ব হিসেবে জমা হওয়া পে-অর্ডার, ডিমান্ড ড্রাফট প্রভৃতি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসেবে নির্ধারিত সময়ে জমা হয় না। ফলে এগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে খোয়া যায় এবং জালিয়াতির মাধ্যমে এই অর্থ আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
দুর্নীতি প্রতিরোধে ১০ দফা সুপারিশ করেছে দুদক। এর একটি হলো তিন কপি দলিল সম্পাদন করে নিবন্ধন করা গেলে নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পরই দাতা-গ্রহীতাকে এক কপি দিয়ে এক কপি ভলিউমে উত্তোলনের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। দুদকের অন্য সুপারিশগুলোও দুর্নীতিমুক্ত সেবা নিশ্চিতকরণ ও সরকারি রাজস্ব আদায়ে সহায়তা করবে বলে আমরা মনে করি। ভূমি নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় জড়িত সব পক্ষ দায়িত্বশীল হলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহির সংস্কৃতি তৈরি হবে এবং সরকারি অফিসে অবৈধ লেনদেন বন্ধ হবে।